1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
করোনায় বিশ্বে চাকরি হারাবে ২০ কোটি, বাংলাদেশে কত?
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

করোনায় বিশ্বে চাকরি হারাবে ২০ কোটি, বাংলাদেশে কত?

বিদেশ ডেস্ক:
  • প্রকাশ: বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) মহামারীর কারণে এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে আগামী তিন মাসের মধ্যে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) একটি প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।

এতে বলা হয়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় চাকরি হারাতে যাচ্ছে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ।

বর্তমানে বিশ্বের পূর্ণ বা খণ্ডকালীন মোট কর্মশক্তির প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পেশা কোনো না কোনোভাবে করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আমেরিকার দেশগুলোয় চাকরি হারাবে দুই কোটি ৪০ লাখ কর্মী। ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় দুই কোটি (ইউরোপে এক কোটি ২০ লাখ)। আরব দেশগুলোতে প্রায় ৫০ লাখ আর আফ্রিকায় এক কোটি ৯০ লাখ কর্মী।

আইএলও বলছে, বিভিন্ন আয়ের মানুষজন এর ফলে ক্ষতির শিকার হবে। কিন্তু সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণি। ২০০৮-২০০৯ সালের বিশ্ব মন্দার সময় যত মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, এই হার তার চেয়েও বেশি।

আইএলও-র তথ্য অনুযায়ী, আবাসন ও খাদ্যের পাশাপাশি নির্মাণ, খুচরা বিক্রি, ব্যবসা এবং প্রশাসনিক খাতগুলো বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বছর শেষে এই হার আরও বাড়বে কিনা, তা নির্ভর করছে ভবিষ্যতে কী ধরনের উন্নয়ন ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তার ওপরে।

আইএলও মহাপরিচালক গাই রেইডার বলেছেন, উন্নত ও উন্নয়নশীল- সব দেশের ব্যবসা ও কর্মশক্তি চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের যৌথভাবে, সুপরিকল্পিতভাবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন সঠিক আর দ্রুত ভিত্তিতে নেওয়া পদক্ষেপই টিকে থাকা আর ভেঙে পড়ার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারে।

কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশ?

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, তার ৬৩ শতাংশ ইউরোপে যায়, বাকি ১৫ শতাংশ যায় আমেরিকায়। বলা যায়, বেশির ভাগ যাচ্ছে, ওই দুইটি বাজারে, সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ, মানুষজন ঘরের ভেতরে।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরু হওয়ার পর এখন ৩.২ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হচ্ছে। তারা বলছে, হোল্ড করতে, সেটা একটা বিরাট ধাক্কা।’

ড. মনসুর জানান, গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় এ বছর মার্চ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩০ শতাংশ কম। এপ্রিলে সম্ভাবনা রয়েছে, গত বছরের তুলনায় ৭০ শতাংশ রপ্তানি হারানো। আর এর সঙ্গে ৪৫ লাখ চাকরি জড়িত।

তিনি বলেন, ‘সরকারের মাধ্যমে তারা হয়তো আগামী তিন মাস সুরক্ষা পাবেন। জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু এটা সাময়িক একটা ব্যবস্থা। এরপরে কী হবে? ব্যবসা করতে না পারলে কোম্পানিগুলো কর্মী রাখবে কেমন করে?’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এর বাইরে অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে বড় একটি ধাক্কা হতে যাচ্ছে রেমিট্যান্সে। সেখানে একটা বিরাট ধস নেমেছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মূল বাজার মূলত তিনটি। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আরেকটা পূর্ব এশিয়া। প্রথম দুইটা বাজার খুব খারাপ হয়ে পড়েছে।’

‘এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় সেখানে চাকরিচ্যুতি শুরু হয়ে গেছে। ফলে এসব দেশে বিপুল বাংলাদেশি শ্রমিক চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন’ যোগ করেন তিনি।

এর মধ্যেই বিশ্বব্যাংক একটি পূর্বাভাসে বলেছে, বাংলাদেশে এই বছর প্রবৃদ্ধির হার ২ থেকে ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণা করেন এমন সংস্থাগুলো বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে এর মধ্যেই শ্রমবাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র বলেছে, শতাধিক কারখানায় কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে।

বিবিসি জানতে পেরেছে, শুধু কর্মী নয়, অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদেরও স্বেচ্ছায় অন্তত ছয় মাসের ছুটিতে যেতে বলেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এই সময়ে তাদের চাকরি থাকলেও তারা বেতনভাতা পাবেন না।

করোনাভাইরাস জনিত পরিস্থিতিতে ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশে যে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়েছে, এর ফলে যারা হোটেল-রেস্তোরাঁ, নির্মাণ খাতের মতো অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, সেসব খাতে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন বেকার বসে রয়েছেন। অনেকেই বেতন ভাতা পাচ্ছেন না।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে কার্যত লকডাউন চলাকালেই কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন কাটছে কিংবা অর্ধেক বেতন দিচ্ছে, এমনকি বেতন দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষক পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য দুইটি ভিন্ন প্রেক্ষিত রয়েছে। আইনগতভাবে আনুষ্ঠানিক সেক্টরে শ্রমিককে ছাঁটাই করতে হলে তার পাওনা-ভাতা দিয়ে বিদায় করতে হয়। কিন্তু সেটা করার মতো মানসিক বা আর্থিক ক্ষমতা অনেক উদ্যোক্তার নেই।’

‘তাই তারা চাইবেন বিকল্পভাবে ছুটি বা শ্রমিকের ভাতা কিছু কম দিয়ে সময়টা দীর্ঘায়িত করার। সেরকম কয়েকটি ঘটনাও সম্প্রতি আমরা দেখেছি’ যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর কর্মকর্তা নাজমা ইয়াসমিন বলেন, ‘কোনো জরিপ ছাড়াই আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করেন, করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে তারা এর মধ্যেই বসে গেছেন।’

‘ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- পার্লার, দোকান, ইত্যাদি বন্ধ হয়ে আছে। সেখানে একজন দুজন করে যারা কাজ করেন, তাদের চাকরিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে’ যোগ করেন তিনি।

বিলসের মতে, বেশ কয়েকটি সেক্টর বিশেষভাবে ঝুঁকিতে পড়বে। তার মধ্যে হোটেল, রেস্তোরাঁ, নির্মাণ খাতের শ্রমিকরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে পড়বে।

তবে বাংলাদেশের কত শ্রমিক এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সেই হিসাব এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশের গবেষণা সংস্থাগুলো।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!