পদ্মা নদীতে জেলেদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয় নৌ-পুলিশ। নৌ-পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করতেন ট্রলারের মাঝি। নৌ-পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গোপন অনুসন্ধান, শিবালয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র ও মামলার এজাহারে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ ট্রলারের মাঝি রাজরাড়ির গোয়ালন্দঘাট থানার নতুনপাড়া এলাকার মৃত আনোয়ার শেখের ছেলে মো. নজরুল শেখকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে।
দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. নজরুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন সময়ে নৌ-পুলিশ ওই নজরুলের ট্রলার নিয়ে পদ্মা নদীতে অভিযানে যেতেন। গত ১৫ই জানুয়ারি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার নয়াকান্দি এলাকার বিকাশ হালদার (২০) ও রঞ্জন হালদার পদ্মায় মাছ ধরছিলেন। এ সময় ট্রলারের মাঝি নজরুলসহ ২/৩ জন তাদের কাছে গিয়ে ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ও নদীতে মাছ ধরতে দেবে না বলে ভয়ভীতি দেখান।
বিষয়টি জানাজানি হলে নৌ-পুলিশ ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গোপন অনুসন্ধানে বিভিন্ন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। তাছাড়া, পাটুরিয়া নৌ-থানা ও দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশের কেউ জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের সঙ্গে জড়িত নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। এরপর অভিযান চালিয়ে নজরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়ালন্দ থানায় মামলার দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে, গত মাসের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়াকান্দি গ্রামের জেলেদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। অনেকে ক্ষোভে পেশা বদলের সিদ্ধান্তও নেন। জেলেরা গিয়ে শিবালয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান জানুকে বিষয়টি জানান। এরপর নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে পত্র-পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়।
এ ঘটনা কেন্দ্র করে গতকাল শিবালয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান জানু স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করেছেন, জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি, জাল জব্দের অভিযোগ শুনে তিনি পাটুরিয়া নৌ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমানের কাছে বিষয়টি জানাতে চান ও ব্যবস্থা নিতে বলেন। পরে নৌ-পুলিশের কেউ এ ঘটনায় জড়িত নন বলে তাকে নিশ্চিত করেন। প্রত্যয়নপত্রে ওসি মো. মিজানুর রহমানকে অত্যন্ত ভদ্র, সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ অফিসার অ্যাখ্যা দিয়ে আরও উল্লেখ করেছেন যে, স্থানীয় পর্যায়ে ও জেলেদের কাছে ব্যাপক খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন নৌ-পুলিশের কোন সদস্য চাঁদাবাজি ও দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়।
এ ব্যাপারে পাটুরিয়া নৌ থানা পুলিশের ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, তার বদলির আদেশ হয়েছে। তবে, নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। তা সঠিক নয়। নৌ-পুলিশ সদস্যরা চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিলেন না। নৌ-পুলিশের নাম ভাঙিয়ে ট্রলারের মাঝি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিল। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে বিষয়টির সত্যতা মিলেছে। মাঝিকে গ্রেপ্তার ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।