মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ধূসর গ্রামে পরকীয়ায় উধাও হয়ে স্বামীকে তালাক দিয়ে দেবরকে বিয়ে করার ক’দিন পরে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে দুই ছেলের জনককে বিয়ে করেছেন এক মেয়ের জননী পার্বতী হালদার (২২) (বর্তমানে মোছাম্মদ সোমা আক্তার)। তারা আত্নগোপনে থেকে তালাক, ইসলাম ধর্মগ্রহণ ও বিয়ের আইনি কাগজপত্র এলাকার বিভিন্ন জনের কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তাদের এসব কার্যকলাপে প্রতিবেশি ও স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।
স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, পাঁচ বছর আগে পার্শ্ববর্তী খলসী গ্রামের অরুণ বিশ্বাসের মেয়ে পাবর্তীর সঙ্গে ধূসর গ্রামের কালীপদ হালদারের মেঝো ছেলে বাবুলাল হালদারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে তিন বছর আগে এক মেয়ের জন্ম হয়। বাবুলাল ঢাকায় কাঠের ফার্নিচার তৈরির কাজ করেন। স্ত্রী ও কন্যা শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে নিজ বাড়িতে থাকতেন।
কিছুদিন ধরে সুফল ও পাবর্তী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। গত ৪ঠা জানুয়ারি পার্বতী ও সুফল বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। ৮ই জানুয়ারি পার্বতী হালদার তার স্বামী বাবুলাল হালদারকে এফিডেভিট করে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী তালাক দেন। একই দিনে আরেকটি এফিডেভিট করে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী দেবর সুফল হালদারকে বিয়ে করেন।
সুফল হালদার অভিযোগ করেন, পার্বতীকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে কোর্টে বিয়ে ও সাভার এলাকায় বাসা ভাড়া করে দেয়ার সহযোগিতা করেন তারই প্রতিবেশি বন্ধু মৃত কেচমত শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। বিয়ের পর তারা সাভারের এলাকায় বাসা নিয়ে থাকতেন ও ঠিকাদারের কাজ করতেন সুফল। সেখানে জাহাঙ্গীর আসা-যাওয়া করতেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীর বাসার ফার্নিচারসহ পার্বতীকে নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা বলে সেখান থেকে উধাও হয়ে যান। পরে খোঁজাখুজি করেও তাদের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
পার্বতীর বাবা অরুণ হালদার অভিযোগ করেন, বাবুলালকে তালাক দিয়ে তার মেয়ে সুফলকে বিয়ে করেছে। বিষয়টি বাবুলাল তাকে ফোনে জানিয়েছিল। পার্বতীও তাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়ে জীবিত আছে নাকি হত্যা করে লাশ গুম করেছে কিংবা মেয়েকে কোথায় রেখে এসেছে। এর দায়-দায়িত্ব সুফল ও তার পরিবারকেই নিতে হবে। মেয়েকে হাজির না করলে সুফল ও তাদের পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে তিনিও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলমের মাতা সাজেদা বেগম জানান, জাহাঙ্গীরের দুই ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীর সাভারে কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যায়। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। সুফল বাড়ি এসে বলছে পার্বতীকে নিয়ে জাহাঙ্গীর উধাও হয়ে গেছে। এলাকার অনেকের কাছে জাহাঙ্গীর পার্বতীকে বিয়ের কাগজপত্র পাঠিয়েছে। তাদের খোঁজাখুজি করা হচ্ছে। এখনও তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাঙ্গীর এলাকার বিভিন্নজনের ফোনে তালাক, ইসলাম ধর্মগ্রহণ ও বিয়ের আইনি কাগজপত্র পাঠিয়েছেন। এতে উল্লেখ রয়েছে, ১লা ফেব্রুয়ারি পার্বতী সুফলকে এফিডেভিট করে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী তালাক দিয়েছেন। এরপর ১৪ ই ফেব্রুয়ারি এফিডেভিট করে হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেছেন পার্বতী। পার্বতী থেকে এখন তার নাম মোছাম্মদ সোমা আক্তার। এরপর আরেকটি এফিডেভিট করে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী জাহাঙ্গীরকে বিয়ে করেছেন সোমা। তাদের এসব কার্যকলাপে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশি ও স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।
স্থানীয় উথলি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্বাস আলী বলেন, ‘সব পক্ষই আমার কাছে এসেছিলেন। তারা থানায় জিডিও করেছেন। মেয়েটিকে সন্ধান পাওয়া গেলে কিংবা উদ্ধারে করে এনে সবপক্ষ নিয়ে বসে সুরাহা করার উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রয়োজনে তারা আইনের আশ্রয় নিবেন।
আরও পড়ুন:
মানিকগঞ্জে পরকীয়ায় দেবরের সঙ্গে ভাবি উধাও