চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ মৌসুমে সারা দেশে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে। এ বছর বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, উৎপাদনশীলতা বেশি হওয়ায় এ বছর হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধিতে জোর দেয়া হয়েছিল। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। হেক্টরপ্রতি গড়ে এক টন করে বেশি ফলন হলেও কমপক্ষে তিন লাখ টন উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের আস্তনা গ্রামে বোরো ধান কর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক।
ধান কর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধনের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সারা দেশের বোরো ধান সফলভাবে ঘরে তুলতে পারলে করোনাকালেও দেশে খাদ্য নিয়ে ঝুঁকি থাকবে না। মহামারী করোনাকালে খাদ্য নিয়ে মানুষকে যাতে আতঙ্কে থাকতে না হয়, খাদ্যের যাতে কোনো অভাব না হয়, আমরা সেটি নিশ্চিত করতে দৃঢ়ভাবে কাজ করছি। বোরো মৌসুমে দেশে সবচেয়ে বেশি ধান-চাল উৎপাদন হয়। সেজন্য হাওরসহ সারা দেশের ধান কাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আজ ধান কর্তন উদ্বোধন করেছি, যাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ে। হাওরসহ সারা দেশের বোরো ধান সফলভাবে ঘরে তুলতে পারলে দেশে খাদ্য নিয়ে তেমন কোনো ঝুঁকি থাকবে না। আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারব। সফলভাবে বোরো ধান কর্তনের জন্য সম্মিলিতভাবে সারা জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশে চালের চাহিদা ও ভোগ বেড়েছে। দেশে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ। প্রতি বছর ২২ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। দেশের এসব মানুষের অন্ন আমাদের দিতে হয়। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার খাবার জোগান দিতে হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশ থেকে খাদ্য কিনেই রোহিঙ্গাদের দেয়। বাইরে থেকে খাদ্য আনা হয় না। গত মৌসুমে বন্যার কারণে ধান-চালের দাম কিছুটা বেশি ছিল। সেজন্য বছরের শুরুতেই আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম যেকোনো মূল্যে উৎপাদন বাড়াতে হবে। বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা এ বছর বেশি করে কৃষকদের মাঝে বিনা মূল্যে বীজসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ প্রণোদনা দিয়েছি। শুধু হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধিতে দেয়া হয়েছে প্রায় ৭৩ কোটি টাকার প্রণোদনা। এতে করে কৃষকরা উৎসাহিত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান, সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নাহার শাম্মী প্রমুখ।