টানা চার দিন বন্ধ থাকার পর লকডাউনের পঞ্চম দিন শুক্রবার খুলেছে ঢাকার বিপণিবিতান। করোনার কারণে গত বছর থেকে লোকসান গুনতে থাকা ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার জন্য মহামারিতেও দোকানপাট খোলা রাখার জন্য একরকম মরিয়া।
বিপণিবিতানগুলো সকালে ক্রেতাশূন্য থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে চাপ বাড়ে ক্রেতাদের। তখনই স্বাস্থ্যবিধি পালনে অনীহা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তির দিকে থাকায় ক্রেতার সংখ্যা ছিল কম। ফলে মার্কেট খুললেও ব্যবসা নিয়ে শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ প্রয়োজন থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কেনাকাটা করতে বের হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর এলাকায় দেখা যায় বিপণিবিতানগুলো সকালেই খুলেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকলেও সকালে ক্রেতা সমাগম ছিল অনেকটাই কম। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানগুলোতে বসেছেন বিক্রয়কর্মীরা।
এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সরকার সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে ৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের “লকডাউন” ঘোষণা দেন সড়ক মন্ত্রী। ১১ দফা বিধিনিষেধের মধ্যে গণপরিবহন ও শপিং মল বন্ধ থাকার কথা বলা হয়। তবে রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের আন্দোলনসহ সারাদেশে দাবির প্রেক্ষিতে শর্ত সাপেক্ষে দোকান শপিং মল, মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
নির্দেশনা অনুযায়ী গত চার দিন শপিং মল, দোকানপাট ও বিপণিবিতান বন্ধ থাকলেও অলিগলির বেশির ভাগ দোকানপাটই খোলা ছিল। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি।
লকডাউনের মধ্যেই গত বুধবার থেকে নগরীতে গণপরিবহন চলাচল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে মার্কেট খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে শপিং মল ও দোকানপাট। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে মার্কেট খুলে দেয়া হলেও বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দোকানে ক্রেতার আগমন আগের মতো হবে না। তবে অনেকের ধারণা, সরকার যদি স্বাভাবিক নিয়মে স্বাস্থ্যবিধি মানার দিকে নজর দেয়, তবে মার্কেট আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।
নিউমার্কেটের বিক্রেতা হাবিব সুমন বলেন, ‘প্লিজ ভাই আপনারা নেগেটিভ নিউজ কইরেন না। আমরা দুই ঈদে লোকসান খাইছি। এইবার একটু ঘুরে দাঁড়াইতে চাই। ক্রেতারা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তবে আমাদের ব্যবসা করতে কোনো সমস্যা হবে না।’
মৌচাক মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী বলেন, ‘সরকার যদি লকডাউন দেয় তবে একটা ভীতির সৃষ্টি হয়। আমাদের বেশির ভাগ ক্রেতা মধ্যবিত্ত শ্রেণির। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়াতে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাই কেনাকাটাকে এবারও অনেকে গুরুত্ব দেবে না। আবার অনেকেই নিজের কাছে টাকা রেখে দিতে চাইবে।’
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বাজারে ক্রেতা থাকবে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। একদম বন্ধ করে দেয়ার চেয়ে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকলে তাদের সুবিধা হয়।
গাউছিয়া মার্কেটে পরিবার নিয়ে আসা আরমান হোসেন বলেন, লকডাউনে বাইরে বের হওয়া হয়নি। আজ মার্কেট খোলা হয়েছে জেনে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনতে এসেছি।
দোকান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক জানিয়ে নিউমার্কেটের দোকানি ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, বেশ কিছুদিন দোকান বন্ধ থাকায় আজ (গতকাল) তেমন বিক্রেতা নেই, সামনে বিক্রি ভালো হবে আশা করি। একেবারে বন্ধ থাকার চেয়ে অল্প বিক্রি হলেও আমাদের পেট চলবে, স্টাফরা বেতন পাবে। যদিও মালিকরা কম বিক্রিতে মন খারাপ করবে।
ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদ উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরিস্থিতি ভালো। ক্রেতারা খুশি, ব্যবসায়ীরা খুশি।
স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিথ্যা কথা। আসলে ৯০ ভাগ লোকজনই স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার দোকান খুলেছেন। সর্বাত্মক লকডাউন আসলে কি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে দোকান মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, তখন দোকান মালিক সমিতি বসে সিদ্ধান্ত নিবে।
শান্তিনগর এলাকায় টুইন টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স সকাল ৯টায় খোলা হলেও ক্রেতা নেই। দোকানের কর্মচারীদের স্যাভলন ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে দোকানের সামনে পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। শপিং কমপ্লেক্সের মুনতাহা শাড়ি দোকানের মালিক মো সুমন জানালেন ভিন্ন কথা।
ব্যবসায় মন্দা তুলে ধরে সুমন বলেন, আমাদের সবকিছু সরকারের হাতে। এমন লকডাউন ভীতি না তৈরি করে যদি আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব নিয়ম করা যায় তবে ব্যবসায়ীদের কোনো ঝামেলা হবে না। আপাতত দুই-চার দিন পর অবস্থা বুঝতে পারব।
প্রসঙ্গত, লকডাউনে টানা চার দিন বন্ধের মাঝে প্রতিদিনই বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর নিউমার্কেট, গুলিস্তান এলাকায় বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।