1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
সংক্রমণ রুখতে আজ থেকে কঠোর বিধিনিষেধ
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:০৯ অপরাহ্ন

সংক্রমণ রুখতে আজ থেকে কঠোর বিধিনিষেধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশ: সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের উচ্চমাত্রার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘লকডাউন’ বিষয়টি উল্লেখ না করে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত চলাচল ও কাজে এসব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। গতকাল রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

সারা দেশে জেলা ও মাঠপ্রশাসনকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত টহল জোরদার করতে বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। মহামারী পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত ২৯ মার্চ যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, তার আলোকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে এটিকে ‘লকডাউন’ উল্লেখ না করলেও সরকারের মন্ত্রী এবং অধিদপ্তরসহ কর্মকর্তারা এবং জনগণ এটিকে লকডাউন বলেই উল্লেখ করেন। তারা বলেন, লকডাউনের আদলেই এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে উচ্চ সংক্রমণের ‘লকডাউনের’ সিদ্ধান্ত কিছুটা দেরি হয়েছে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা সমালোচনা করে বলেছেন, এক সপ্তাহের জায়গায় এ ‘লকডাউন’ অন্ততপক্ষে ১৫ দিন করা ভালো ছিল। বেশি ভালো হতো ২১ দিন ঘোষণা করা হলে। একই সঙ্গে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, নির্দেশনাগুলোতে অনেক অস্পষ্টতা রয়েছে। আবার গতকাল ‘লকডাউন’ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রাজধানী ও শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাওয়াকেও সংক্রমণ গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে বড় কারণ হতে পারে বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, ‘নিয়মকানুন মানাতে যদি মাঠপর্যায়ে সরকার ব্যর্থ হয় তাহলে একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে আক্রান্তের হার বাড়বে। তাই তারা গ্রামেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন। একইভাবে নিম্ন আয়ের মানুষের খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা দ্রুত বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার গুরুত্ব দেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, পরিস্থিতি বুঝে ‘লকডাউনের’ সময় বাড়ানো হবে। আর এটাকে লকডাউন বলা হয়নি যেন আতঙ্ক না ছড়িয়ে পড়ে। সরকার কৌশলগত কারণে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

জানা গেছে, কৃষিপণ্য পরিবহন, কেনা-বেচা ও সরবরাহ কাজে সহযোগিতা চেয়ে দেশের সব জেলা প্রশাসক-ডিসি ও পুলিশ সুপার-এসপিদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গতকাল কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সরকার শর্ত সাপেক্ষে আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত সার্বিক কার্যাবলি বা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময়কালে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে রাসায়নিক সার ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য, উপকরণ, ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের পণ্য পরিবহন ও কেনা-বেচায় যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় এবং বোরো ধান কাটাজনিত কারণে আন্তঃজেলা কৃষি শ্রমিকের যাতায়াতে যেন বাধার সম্মুখীন না হয়, সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সহযোগিতা দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার যেটা দিয়েছে, সেটা লকডাউন না, করোনা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু কর্মসূচি। এতে লকডাউনের কিছু নেই। এই কর্মসূচির মধ্যে রোগী শনাক্ত করে আইসোলেট করা, টেস্টের ব্যাপারে কিছু বলা নেই। সেসব থাকতে হবে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ভাইরাসের সুপ্তিকাল ১২-১৪ দিন। কমপক্ষে দুই সপ্তাহ হলে ভালো হতো। কারণ ১৪ দিন লেগে যায় লক্ষণ প্রকাশ পেতে। তখন তাকে হাসপাতালে নিতে হয়। এ সময়ে যাদের লক্ষণ প্রকাশ পাবে, তাদের টেস্ট করে পজিটিভ লোকজনদের আইসোলেট করতে হবে। আরও দুই সপ্তাহ লেগে যাবে। চার সপ্তাহ লেগে যাবে। এপ্রিল মাস পুরোটা লাগবে। এই চার সপ্তাহের মধ্যে আমরা যদি সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, তাহলে আমরা পঞ্চম সপ্তাহ থেকে ধরে নিতে পারি সংক্রমণ নিম্নগামী হবে। তবে সেটা যদি সারা দেশে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে। শুধু ঢাকা শহরে নয় বা অল্প একটু জায়গায় করা হলো, আর বাকিটা খালি থাকল, তাহলে হবে না। সব জায়গায় এসব ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে।

বিধিনিষেধ আরও বাড়তে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে গত শনিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সময় বাড়ানো হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এক সপ্তাহ আগেই জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কঠোর হতে। জেলাগুলো সেভাবে মাঠে কাজ করছে। এছাড়া গত শনিবার ‘লকডাউন’ ঘোষণার সিদ্ধান্তের পর থেকেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো পৃথক এবং সমন্বিত বৈঠক করেছে। সিটি করপোরেশনগুলো করণীয় নির্ধারণ করতে বৈঠক করেছে।

সরকারের দেওয়া প্রজ্ঞাপনে গণপরিবহন এবং শপিং মল বন্ধ রাখার কথা যেমন আছে, তেমনি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে মানা করা হয়েছে। কাঁচাবাজার এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করতে বলা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী সাত দিন সব ধরনের গণপরিবহন সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। তবে উৎপাদন ও সেবায় নিয়োজিত গণপরিবহনের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। বিদেশি ও বিদেশফেরত যাত্রীদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হবে না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেটের জরুরি সেবাকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা কাজ করবেন। তাদের নিয়ে পরিবহন চলাচল করতে পারবে। ডাক, বন্দর এবং ত্রাণ বিতরণ কাজও অব্যাহত থাকবে।

সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস, আদালত ও বেসরকারি অফিস শুধু জরুরি কাজ করবে। তাদের কর্মীদের নিজ পরিবহনে আনা-নেওয়া করতে হবে। শিল্পকারখানা ও নির্মাণকাজ চলবে। শিল্পকারখানার শ্রমিকদের নিজ ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল করতে হবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকেও ঢাকায় সীমিত পরিসরে ফিল্ড হাসপাতাল করতে বলা হয়েছে।

সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ওষুধ কেনা, দাফন, সৎকার, নিত্যপণ্য কেনার মতো অতি জরুরি কাজ ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না।

খাবারের দোকান থেকে খাবার কিনে আনা যাবে। দোকানে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা যাবে না। শপিং মল বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইনে কেনাকাটা করা যাবে। কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। ব্যাংকিংব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু থাকবে।

এক সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে গণজমায়েত উপেক্ষা করার জন্য। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরে অবস্থান করলে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করা যেতে পারে এ ভাবনা থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও গতকালই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা চালু রেখেছে। সরকার একদিকে চাচ্ছে মানুষকে ঘরে রাখতে, অন্যদিকে বইমেলা চলতে দিয়ে সরকার স্ববিরোধী কাজ করছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলেও সরকারি প্রায় সব অফিসই খোলা থাকবে। জরুরি কাজ করার জন্য অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এ সময় অফিস করতে হবে। এ কারণে প্রতিটি মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা, করপোরেশন নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী নিজস্ব সময়সূচি তৈরি করেছে।

এর আগে গত শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আলাদা আলাদাভাবে সোমবার (আজ) থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনের কথা জানিয়েছিলেন সাংবাদিকদের। কিন্তু একই দিন বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এ প্রস্তাবে ‘লকডাউন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, সরকার ‘লকডাউন’ আরোপ করতেই পারে। কিন্তু লকডাউন আরোপের কিছু বিধিবিধান আছে। লকডাউনের মাধ্যমে সবকিছু বন্ধ করা হলে কেউ খাদ্য সংকটে পড়লে বা নিত্যপণ্যের সংকটে পড়লে তাকে সেই খাদ্য বা পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ কারণে লকডাউন আরোপ করা কঠিন।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!