‘মিসরীয় সভ্যতা’ বলতে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে একেকটি সুউচ্চ পিরামিড, নীল নদ ও ফারাওদের কীর্তিকথা। মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে বেশ সমৃদ্ধ ছিল উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশ।
সেই প্রাচীনকাল পেরিয়েও এখনো রহস্য হয়ে আছে মিসরের পিরামিড। সভ্যতার সাক্ষী হয়ে থাকা দেশটির অসংখ্য ইতিহাস হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে। ধুলোর গহ্বরে মিলিয়ে গেছে অনেক পুরোনো শহর। তবে সেই ইতিহাস পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।
এবার তেমন এক অভিযানে মিশরে ৩০০০ বছরের এক পুরোনো শহর খুঁজে পেয়েছে এক দল প্রত্নতত্ত্ববিদ। যা দেশটিতে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়।
নীল নদের পশ্চিম তীর লুক্সরের বালুর নিচ থেকে আবিষ্কৃত এই শহরের নাম ছিল ‘দ্য রাইজ অব আতেন’। প্রত্নতত্ত্ববিদ দলটির নেতৃত্বে থাকা জাহি হাওয়াস এক বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এই শহর রাজা আমেনহোতেপ-৩ এর সময়কার। ১৩৯১ থেকে ১৩৫৩ খ্রিষ্টপূর্বে মিশর শাসন করতেন তিনি। হাওয়াস বলেন, ‘এই শহর ছিল মিসরীয় সাম্রাজ্যের যুগে বৃহত্তম প্রশাসনিক ও শিল্প এলাকা।’
প্রত্নতত্ত্ববিদরা শহরটির রাস্তার পাশে অবস্থিত অক্ষত দেয়ালের ১০ ফুট উঁচু বাড়ি-ঘরের সন্ধানও পেয়েছেন এবং কক্ষগুলো দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সামগ্রীতে পরিপূর্ণ ছিল। যেন প্রাচীন অধিবাসীরা গতকালকেই বাড়ি ছেড়েছেন, তেমনই চিত্র এসব কক্ষে। যেমন আংটি, রঙিন মৃৎশিল্পের জাহাজ, তাবিজ তৈরির ছাঁচ, মাংস নেওয়ার পাত্র, সুতো কাটা ও কাপড় বোনার বিভিন্ন যন্ত্র এবং আয়না ও ধাতু তৈরির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে এসব বাড়িঘরে।
এই প্রত্নতাত্ত্বিক দল শহরটির মধ্যে সম্পূর্ণ ওভেন বা চুল্লি ও মাটির তৈরি পাত্রওয়ালা বিশাল এক রুটির কারখানাও খুঁজে পেয়েছে। যার আকার-আয়তন প্রমাণ করে, এটা বিশাল সংখ্যার শ্রমিক ও কর্মীদের আনাগোনায় মুখর ছিল।
এছাড়া শহরটিতে অন্যান্য আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে রশিতে হাঁটু জড়িয়ে যাওয়া ও অস্ত্র দিয়ে কবর দেওয়া এক ব্যক্তির কঙ্কাল। এটিকে ‘উল্লেখযোগ্য কবর’ হিসেবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মাথার কঙ্কালটির স্থিতি ও অবস্থান কিছুটা অস্বাভাবিক।’
শহরটির আবিষ্কারের প্রসঙ্গে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মিসরীয় পুরাতত্ত্বের প্রফেসর বেটসি ব্রায়ান বলেন, ‘পুরোনো এই শহরের আবিষ্কার তুতানখামোনে স্তম্ভের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্নতাত্ত্বিকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।’