1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
ভারত থেকে হাঁস-মুরগি-ডিম বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন

ভারত থেকে হাঁস-মুরগি-ডিম বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ

বাংলা বাহন ডেস্ক
  • প্রকাশ: শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

ভারতের ১০টি রাজ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বার্ড ফ্লু (অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস) ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও যাতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ভারত থেকে সব ধরনের হাঁস-মুরগি, ডিম ও এসবের বাচ্চা আমদানি অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি দেশের সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা কেবল সতর্কতামূলকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভারতে যেখানে রোগটি শনাক্ত হয়েছে, তা বাংলাদেশ থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে। এছাড়া ভারতও ওইসব এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে। আমরা আমাদের মাঠকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি। কোনো প্রকার উপসর্গ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা তো আছেই। তাই ক্রেতাসাধারণকে অনুরোধ করব, আতঙ্কিত হয়ে আপনারা হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ করবেন না।

এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল জব্বার শিকদার গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ভারতের যেসব এলাকায় বার্ড ফ্লু সংক্রমিত হয়েছে সেসব এলাকা আমাদের সীমান্ত এলাকায় নয়। এরপরও আমরা সতর্ক রয়েছি। ইতিমধ্যে সব খামারিকে সতর্ক করা হয়েছে। সরকারি খামারগুলোতেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বার্ড ফ্লুর কোনো রকম উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য খামারিদের বলা হয়েছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, ডিম বা মুরগি খাওয়া নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছি।

নিষিদ্ধের ব্যাপারে গত মঙ্গলবারই পৃথক তিনটি চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন। তিনি জানান, ভারত থেকে কোনোভাবেই যাতে মুরগির বাচ্চা, হাঁস-মুরগি, পাখি ও ডিম আমদানি না হয় সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এ রোগের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে সীমান্ত পথে বৈধ ও অবৈধভাবে মুরগির বাচ্চা, প্যারেন্টস্টক, হাঁস-মুরগি, পাখি ও ডিমের অনুপ্রবেশ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সমুদ্র, নৌ এবং স্থলবন্দর দিয়ে মুরগির বাচ্চা, প্যারেন্টস্টক, হাঁস-মুরগি, পাখি ও ডিমের অনুপ্রবেশ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্র্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশে বার্ড ফ্লুর কী অবস্থা :

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু হাদী নুর আলী খান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত এইচ৫এন১, এইচ৫এন২, এইচ১এন১ ও এনএন২ প্রজাতির ভাইরাস দেখা যায়। ‘টাইপ-সি, টাইপ-ডি, টাইপ-এ’ তিন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জার মধ্যে আমাদের দেশে দেখা যায় টাইপ-এ। এটাকে অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বলে। একসময় এই ভাইরাস মানবদেহে সংক্রমিত হতো। মানুষ মারা যেত। এখন ভাইরাস তার রূপ পরিবর্তন করেছে। মানুষে খুবই কম সংক্রমিত হয়। মৃত্যুর সংখ্যাও কম। আমরা জিনোম সিকোয়েন্স করেছি। অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা তার রূপ পরিবর্তন করেছে। তাতে দেখা গেছে, মানুষকে সংক্রমিত করার যে ক্ষমতা, সেটা সে অর্জন করেনি।

সতর্ক অবস্থায় খামারিরা :

বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারতের হায়দ্রাবাদ, পশ্চিম বাংলার মেদিনিপুর, আসামসহ ৮-১০টি প্রদেশে এই রোগ দেখা দিয়েছে। ভারত সময়মতো তথ্য না দেওয়ায় প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। আমাদের দেশে ২০১৩ সাল থেকে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন চালু আছে। এই ভ্যাকসিনের পরে দেশে বার্ডফ্লুর কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। তবে সম্প্রতি ভ্যাকসিনটি আর সেভাবে কাজ করছে না।

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এখন দেশে ৮৮ হাজার পোলট্রি ফার্ম চালু আছে। মোট ফার্মের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি। এই শিল্পে বিনিয়োগ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। সপ্তাহে উৎপাদন হচ্ছে ৬৫ লাখ মুরগির বাচ্চা।

ভারতে দেখা দেওয়ার পর আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিদের বলেছি যে, বায়োসেফটি বা জৈব নিরাপত্তা শক্ত রাখতে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়াসহ জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী থেকে খামারের প্রাণীদের আলাদা রাখতে হবে।

এসব পোলট্রি পণ্য আমদানি নিষিদ্ধের ফলে পোলট্রি বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, ২০০৭ সাল থেকেই ভারত থেকে এসব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ ছিল বার্ড ফ্লুর কারণেই। এখন নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়াযাতে সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে কোনোভাবেই এগুলো দেশে প্রবেশ করতে না পারে। আমাদের দেশের চেয়ে ভারতের বাজারে এসব পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় এমনিতেই বাংলাদেশে কম আসে। নিষিদ্ধ হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে যেন আসতে না পারে সে জন্য সতর্ক করল সরকার। নিষিদ্ধের কারণে এসব পণ্যের দামের কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।

কী ধরনের সতর্কতা প্রয়োজন :

অধ্যাপক ড. আবু হাদী নুর আলী খান বলেন, অধিকাংশ ফার্মের বায়োসিকিউরিটি বা জৈব নিরাপত্তা ভালো না। খামারে যাতে অন্য কোনো পাখি, ইঁদুর ঢুকতে না পারেসেটা নিশ্চিত করতে হবে। মুরগির বাচ্চাগুলো আনতে হবে সুস্থ পরিবেশ থেকে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়াবে না। ভাইরাসটা যেহেতু হাঁস, দেশি মুরগিতে আছে, সেখান থেকে সহজেই খামারে ঢুকে যাচ্ছে।

ভ্যাকসিন ব্যবহারে সতর্ক করে দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ভ্যাকসিন বাজারে এসেছে। বাংলাদেশে প্রায় চার ধরনের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি। কিন্তু ভ্যাকসিন হচ্ছে একটা কি দুটির বিরুদ্ধে। ফলে ভ্যাকসিন সেভাবে কাজ করছে না। আমাদের খামারগুলোতে ঠিকমতো আলো-বাতাস আসা-যাওয়া করে না, ভেন্টিলেশন ভালো না। রাতের বেলা চট দেওয়া হয়, কিন্তু পলিথিন দেওয়া হয় না। এসব কারণে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তখন শ্বাসনালির জীবাণুগুলো সক্রিয় হয়। তখন অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জাকে বাড়তে সহায়তা করে। কিন্তু খামারে এসব ব্যবস্থা ঠিকমতো থাকলে এই ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে না। খামারিদের এক খামার থেকে আরেক খামারে যেতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, খামারে কাক, শালিক, চড়ুই, দেশি মুরগি, হাঁস যাতে না ঢোকেসেটা খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে মুরগির বাচ্চাগুলোর ওজন ৩৫ দিনে দেড় থেকে পৌনে দুই কেজি করার নিয়ম। কিন্তু খামারিদের লক্ষ্য থাকে ২৮ দিনে পৌনে দুই কেজি করার। সাত দিন খাবার কম দিয়ে ওজন বাড়ানোর জন্য ওষুধ খাওয়ায়। তখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। সেটা করা যাবে না।

নিজস্ব খামারগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে সতর্ক থাকতে হবেজানিয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসীন বলেন, আমাদের যে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, সেটার সঙ্গে আমাদের এখানে মুরগি-হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কোনো পরিবর্তন এলো কি না, বা রোগটার নতুন কোনো রূপান্তর হয়েছে কি না সেটা পরীক্ষা করা উচিত।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের যৌথ সমীক্ষায় দেখা গেছে, অতিথি পাখির মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়। এসব পাখি সার্বিয়া অঞ্চল থেকে ভারতের ওপর দিয়ে আমাদের দেশে আসে। পাখির মাধ্যমেই ছড়ায়। বেশকিছু দেশে মানবদেহে অল্পবিস্তর সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশে মানবদেহে সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। হাঁসের মধ্যে সহ্য করার ক্ষমতা বেশি। আক্রান্ত হলেও হাঁস মারা যায় না, তবে ভাইরাসের অ্যান্টিবডি বহন করে। মুরগি থেকে মুরগিতে ছড়ায়।

আক্রান্ত মুরগির মাংস বা ডিম খেলে মানবদেহে সংক্রমণের আশঙ্কা কতটুকু জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সাধারণত ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আরএনএ টাইপের ভাইরাস এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়। তাপ, সাবান ও সোডার সংস্পর্শে গেলেই এই ভাইরাস মারা যায়।

একইভাবে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাশ চন্দ্র দাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, বার্ডফ্লু থেকে হাঁস-মুরগি রক্ষার প্রধান উপায় হলো খামারের বায়ু আদান-প্রদানকে নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু আমাদের ৫০ শতাংশ খামারিও সেটা মানেন না। এতে করে এর আগে দুই বার বার্ডফ্লু আঘাত হেনেছিল। তাই খামারিদের এখন থেকে খামারের বায়ু চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চতুর্দিকে পর্দা দিতে হবে। কোনোভাবেই যেন বাইরের পশু-পাখি খামারের আশপাশেও না আসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া সংক্রমিত পশু-পাখিকে সঙ্গে সঙ্গে পুঁতে বা পুড়ে ফেলতে হবে।

সূত্র: দেশ রূপান্তর

ভারতের ১০টি রাজ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বার্ড ফ্লু (অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস) ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও যাতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ভারত থেকে সব ধরনের হাঁস-মুরগি, ডিম ও এসবের বাচ্চা আমদানি অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!