1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
সূর্যের আলো সংরক্ষণে ঘড়ির কাটা এগিয়ে দেয়ার রীতি
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন

সূর্যের আলো সংরক্ষণে ঘড়ির কাটা এগিয়ে দেয়ার রীতি

ফিচার ডেস্ক:
  • প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০২০

সূর্যের আলোর বেশি ব্যবহার করার জন্য ডে লাইট সেভিং টাইম সিস্টেম চালু হয়। জানেন কি? সংরক্ষণের মাধ্যমে সৌরশক্তিকে বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়।

এজন্য সাধারণত ঘড়ির কাটা এক বা দুই ঘণ্টা এগিয়ে দেয়া হয়। ইউরোপসহ উত্তর আমেরিকার অধিকাংশ দেশ এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এই পদ্ধতি চালু রয়েছে। প্রতি বছরের বসন্ত থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ঘড়ির কাটা এই নিয়মে এগিয়ে দেয়া হয়।

ইতিহাস কী?

সূর্যের আলোর যথাযথ ব্যবহারের এই রীতি প্রচলনের বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন একজন বিখ্যাত মার্কিন রাষ্ট্রনায়ক এবং বিজ্ঞানী ছিলেন। ১৮ শতকের শেষার্ধে তিনি যখন প্যারিসে বসবাস করতেন তখনই এই বিষয়টি তিনি আবিষ্কার করেন। কীভাবে সূর্যের আলোর ভালো ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে তিনি জ্ঞানার্জন করেন।

১৭৮৪ সালের দিকে তিনি অনুধাবন করেন জনগণ যদি ভোরে ঘুম থেকে ওঠে তাহলে অনেক মোমবাতি বা জ্বালানির সাশ্রয় হবে। তবে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনার পরামর্শ নয় বরং সবাইকে তিনি ঘুম থেকে ভোরে উঠতে বলেন। নিউজিল্যান্ডের পতঙ্গবিজ্ঞানী জর্জ ভার্নন হাডসন প্রথম ১৮৯৫ সালে গ্রীষ্মের সময় ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনার প্রস্তাব করেন। তিনি সূর্যের আলো বেশি পাওয়া যায় এমন পাঁচ মাস ঘড়ির কাঁটা দুই ঘণ্টা এগিয়ে এনে সময় সমন্বয়ের প্রস্তাব করেছিলেন।

হাডসনের এই ধারণা নিউজিল্যান্ডের কিছু অধিবাসীদের মধ্যে উৎসাহ জাগালেও বেশিরভাগই তাতে সন্দিহান ছিল। এর উপকারিতার বিষয়ে কেউই তখন টের পায়নি। সে কারণেই ১৯২৭ সালের পূর্বে নিউজিল্যান্ড ডে লাইট সেভিং টাইম সিস্টেম চালু করতে পারেনি। অবশ্য তাদের ১০ বছর আগেই অন্য কয়েকটি দেশ এই পদ্ধতি শুরু করেছিল। বর্তমান সময়ে যে ডে লাইট সেভিং টাইম সিস্টেম অনুসরণ করা হয় সরাসরি তার ধারণা প্রদান করেন ব্রিটিশ বিল্ডার উইলিয়াম উইলেট।

বিশ শতকের প্রথম দশকে উইলেট তখন লন্ডনবাসী। সে সময় তিনি বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে খুব ভোরে ওঠার অভ্যাস গড়েন। এর উপকার পেয়ে তিনি ১৯০৫ সালে নিজে থেকেই গ্রীষ্মের সময় ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনতে উৎসাহী হন। ১৯০৭ সালে তার ধারণা সম্পর্কে একটি পূর্ণ বিবরণ ‘দ্য ওয়েস্ট অব ডে লাইট’ শিরোনামে বই প্রকাশ করেন।

ব্রিটিশ এমপি রবার্ট প্রিন্স ১৯০৮ সালে উইলেটের পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্লিয়ামেন্টে ডে লাইট সেভিং বিল উত্থাপন করেন। ব্রিটেনে এর অনুমোদনের জন্য উইলেট বছরের পর বছর চেষ্টা করে গেছেন। কারণ এর পক্ষে বিপক্ষে শক্ত যুক্তি ছিল। ১৯১৫ সালে উইলেট মৃত্যুবরণ করেন। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় ডে লাইট সেভিং টাইম সিস্টেম সম্পর্কে তার প্রদত্ত পরিকল্পনা তখনো কার্যকর হয়নি। উইলেটের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলেও পুরো ইউরোপ জুড়ে আলোচিত হতে থাকে।

এরই মধ্যে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে জার্মানির চিন্তা ছিল কীভাবে অর্থ সাশ্রয় করে যুদ্ধে জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানো যাবে? আর অর্থ সাশ্রয় করার উপায় অনুসন্ধান করতে গিয়েই কাইজার উইলহেমের জার্মানি উইলেটের ডে লাইট সেভিং টাইম সিস্টেমটি কাজে লাগায়। অর্থাৎ ১৯১৬ সালে জার্মানি প্রথম দেশ হিসেবে ডে লাইট টাইম সিস্টেম প্রচলন করে।

পরবর্তীতে ব্রিটেনসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশসমূহ ডেলাইট সেভিং টাইমের তাৎপর্য অনুধাবন করে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯১৮ সালের ৩১ মার্চ ডে লাইট সেভিং টাইম সিস্টেম প্রচলন করে। বিশ্বযুদ্ধ পরিসমাপ্তির পর ব্রিটেন প্রতি বছর গ্রীষ্মে ডে লাইট টাইম সিস্টেম অনুসরণ করলেও অন্যান্য দেশসমূহ এটাকে যুদ্ধকালীন পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করে বাতিল করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মিত্র এবং অক্ষ শক্তির উভয় পক্ষের দেশসমূহ জরুরি সম্পদ বাঁচানোর জন্য ডে লাইট সেভিং টাইম সিস্টেম প্রচলন করে। এসময় ব্রিটেন পুরো বছরই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। কালক্রমে বিভিন্ন দেশ আইন করে ডে লাইট সেভিং টাইম সিস্টেম প্রচলন করলেও এখনো সব দেশ অনুসরণ করেনি। এর পক্ষে বিপক্ষে এখনো রয়েছে অনেক যুক্তি ও তর্ক।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!