1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: লাশ বেড়ে ২৯
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: লাশ বেড়ে ২৯

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশ: সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১

শীতলক্ষ্যায় লাশের মিছিল দেখল নারায়ণগঞ্জ। শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় লাইটার কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ রাবিত আল হাসান উদ্ধার করা হয়েছে সোমবার। লঞ্চের ভেতর থেকে ২১ শিশু, নারী ও পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে রোববার রাতে পাঁচ নারীর লাশ উদ্ধার হয়। উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধের পর থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিকাশ সাহা (২২) নামে এক যুবক, অজ্ঞাত শিশু ও নারীসহ আরো তিন লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে লাশের সংখ্যা দাড়ালো ২৯ জনে।

এ ছাড়া আরো তিন থেকে চারজন নিখোঁজ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বজনরা শনাক্ত করার পর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক এর আগে জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। এরপর ভেতর থেকে ২১ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। বেলা সোয়া ১টার দিকে উদ্ধার কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর আগে উদ্ধার করা হয় আরো পাঁচজনের লাশ। চারজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর এক অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) মর্গে রাখা হয়েছে।

লঞ্চটি উদ্ধার করে বিআইডব্লিউটিএর এর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। রোববার লঞ্চডুবির পর কালবৈশাখীর কারণে কিছু সময় উদ্ধার তৎপরতা বিঘ্ন ঘটলেও পরে আবার তা শুরু হয়। সোমবার সকাল পর্যন্ত দ্রুত গতিতে শীতলক্ষ্যার কয়লার ঘাট এলাকার নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু এলাকায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটির উদ্ধার কাজ শুরু চলে।

নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে তারা হলেন মুন্সীগঞ্জ সদরের নুড়াইতলী এলাকার রুনা আক্তার (২৪), মুন্সীগঞ্জের মোলাকান্দি চৌদ্দমোড়া এলাকার সুমন আলী ব্যাপারীর ছেলে সোলেমান ব্যাপারী (৬০), তার স্ত্রী বেবী বেগম (৬০), মুন্সীগঞ্জ মালপাড়া হারাধন সাহার স্ত্রী সুনিতা সাহা (৪০), মুন্সীগঞ্জ সদরের উত্তর চর মসুরা অলি উল্লাহর স্ত্রী সখিনা (৪৫), একই এলাকার আরিফের স্ত্রী বিথি (১৮), তাদের সন্তান ১ বছর বয়সী আরিফা (১), মুন্সীগঞ্জ সদরের প্রীতিময়ের স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫৩), মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি চর কিশোরগঞ্জের শামসুদ্দিন (৯০), তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), বরিশালের উজিরপুর উটরা এলাকার হাফিজুর রহমানের স্ত্রী তাহমিনা (২০), মুন্সিগঞ্জের দক্ষিণ কেওয়ার দেবিন্দ্র দাসের ছেলে নারায়ণ দাস (৬৫), তার স্ত্রী পারবতি রানী দাস (৪৫), বন্দরের কামরুজ্জামান, স্বর্ণা দম্পতির শিশু সন্তান আব্দুল জমীর (০২), মুন্সীগঞ্জ সদরের নুরপুর রিকাবি এলাকার শাহ আলম মৃধা (৫৫), মুন্সীগঞ্জ সদরের রতন পাতরের স্ত্রী মহারানী (৩৭), যাত্রাবাড়ি শনিআখড়ার আনোয়ার হোসেন (৫৫), তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০), মুন্সিগঞ্জ সদরের শেয়াগাও পূর্বপাড়া মিঠুন মিয়ার স্ত্রী ছাউদা আক্তার লতা (১৮), শরীয়তপুর নরিয়া এলাকার নুরবকশীর ছেলে আব্দুল খালেক (৭০), ঝালকাঠির কাঠালিয়া এলাকার তোফাজ্জেল হোসেনের মেয়ে জিবু (১৩), বরিশালের স্বরূপকাঠি এলাকার মো. সেকান্দারের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৫০) এবং বন্দরের দক্ষিণ সাবদী এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে মো. নয়ন (২৯)।

নারায়ণগঞ্জ সদর ইউএনও নাহিদা বারিক জানান, মদনগঞ্জ এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছাকাছি এসকে-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় বেশ কিছু যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় অনেকে সাঁতরে তীরে উঠলেও নিখোঁজ রয়েছেন আরো বেশ কিছু যাত্রী।

তিনি জানান, এর মধ্যে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়েছে।

নাহিদা বারিক বলেন, লঞ্চডুবির এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন আমাকেসহ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও নৌপুলিশের প্রতিনিধিও রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন জানান, রাতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ কিছুটা ব্যাহত হলেও সকাল থেকে নিখোঁজদের উদ্ধার অভিযান জোরদার করা হয়।

রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ রাবিত আল হাসানকে ধাক্কা দেয় এসকেএল-৩ নামের একটি কার্গো। সে সময় ৬০ এর অধিক যাত্রিসহ ডুবে যায় লঞ্চটি। এরপর কালবৈশাখী ঘড়ের কারণে উদ্ধার কাজে বিঘ্ন ঘটে। তবে রাতেই পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর সোমবার সকাল থেকে চলে উদ্ধার কাজ। লঞ্চটি ভেসে উঠার পর যখন শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাড়ে বন্দর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন পানির ওপর তোলার পর বেরিয়ে আসে লাশের পর লাশ। সে সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে কয়লারঘাট ও আশপাশের এলাকা।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!