আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র। ২০০০-২০০১ সেশনে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হয়েছি। নতুন আনন্দ, নতুন উদ্দীপনা, নতুন আশা। ঢাবি, ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মননশীল শিক্ষক ড. হাসিবুর রশীদ স্যারের নামডাক শুনতাম। কিন্তু স্যারের সাথে কথা বলার সাহস হত না। দূর থেকে স্যারকে দেখতাম আর মুখোমুখি হলে সালাম দিতাম। স্যার সব সময়ই স্বভাবসুলভ ছোট্ট হাসিতে সালামের উত্তর দিতেন। স্যারকে কখনও অট্টহাসিতে দেখিনি, সব সময় মুচকি হাসিতে দেখেছি।
স্যারকে কোর্সে পেয়েছিলাম পঞ্চম সেমিস্টার থেকে। স্যার আমাদের অপারেশনস ম্যানেজমেন্ট কোর্স পড়াতেন। তখন থেকেই স্যারের সাথে সরাসরি কথা হত। প্রকৃতপক্ষে স্যারের সাথে পরিচয় পঞ্চম সেমিস্টারেই। অত্যন্ত নরম মনের মানুষ। সদালাপি, স্বল্পভাষী ও মার্জিত স্বভাবের একজন আদর্শ ও মননশীল শিক্ষক। স্যারের প্রতিটা কথায় ও আচরণে নির্ভিকতার স্পষ্ট ছাপ পাওয়া যেত। অপারেশন ম্যানেজমেন্টের বিষয়গুলো স্যার অত্যন্ত সুন্দর, সহজ ও সাবলীলভাবে বুঝিয়ে দিতেন। স্যারের পড়ানোর স্টাইল অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল। সবচেয়ে বড় বিষয়, স্যার পড়ানোর জন্য ডিজিটাল ও ম্যানুয়াল— দুই পদ্ধতিই ব্যবহার করতেন। অর্থাৎ, স্যার হোয়াইট বোর্ডও ব্যবহার করতেন। আমি এমনিতে অংকে খুব কাঁচা, কিন্তু স্যারের কোর্সে ভালো করেছিলাম এবং ‘এ’ পেয়েছিলাম কারণ স্যার বোঝাতেন সুন্দর ও সাবলীল ভঙ্গিতে।
স্যার ধীরে ধীরে অল্প কথা বলতেন। কিন্তু সেই স্বল্পকথার ভেতর আমরা অনেক অর্থ খুঁজে পেতাম। স্যার আমাদের কোর্সের অংশ হিসেবে টার্ম পেপার দিয়েছিলেন। টার্ম পেপারের তথ্য সংগ্রহের জন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন লোকেশনে যেতে হয়েছিল। টার্ম পেপার ইস্যুতে একদিন স্যারের কক্ষে গেলাম পরামর্শ নিতে। স্যার আমাকে দুটো কথা বলেছিলেন।
১. তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকবে ও
২. যে তথ্য পাব এবং দেখব সেটাই যেন উপস্থাপন করি। স্যারের কথা সেদিন মনে ধরেছিল খুব, যা আজও আমি মেনে চলি এবং আমার ছাত্রদের সেটিই বলি।
স্যার অপারেশনস ম্যানেজমেন্টের ওপর পিএইচডি করেছেন। এমফিলও করেছেন একই বিষয়ে। স্যার ১৯৯১ সালে কমনওয়েলথ ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ পেয়েছেন। ১৯৮৬ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক স্কলারশিপ পেয়েছেন। মেধা তালিকায় এসএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে স্যার প্রথম এবং এইচএসসিতে তৃতীয় স্থান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। স্যারের কাছ থেকে পেয়েছি সততা ও নির্ভিকতা, পেয়েছি অমায়িক ও মার্জিত ব্যবহার। স্যারের উপদেশ মনে রাখি সব সময়। স্যার বেরোবির ভিসি হিসেবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। একজন মননশীল শিক্ষককের নতুন দায়িত্বের প্রতি সব সময়ই শুভ কামনা ও আন্তরিক অভিনন্দন। মহান আল্লাহপাক স্যারকে দীর্ঘজীবী করুন।
লেখক ও গবেষক : মো. হাবিবুর রহমান
সহকারী অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ই-মেইল : habib80046@gmail.com