“দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ গেছে, অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসেছে, কিন্তু অতীতের কোনো লেখালেখিতে বা সাহিত্যে বর্তমান পরিস্থিতির মতো কিছু পাওয়া যায় না। যুদ্ধের সময়, দুর্যোগের সময়েও মুসলমানরা রমজানের সময় একসঙ্গে হয়ে তাদের ধর্মীয় আচার পালন করেছে।”
সম্প্রতি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়ার গবেষক ফাইজাল মুসাকে এভাবে উদ্ধৃত করেছে আল জাজিরা।
তিনি এক কথায় বললেন, “এমন এক পরিস্থতি অতীতে কখনো হয়েছে- আমার জানা নেই।”
বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই রমজান মাস শুরু হচ্ছে, কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের যে ধরনের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রোজা পালন করতে হবে, তার নজির ইতিহাসে বিরল। বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার নানা দিক।
বেশির ভাগ দেশে মুসলমানরা আত্মীয়-পরিজন-প্রতিবেশিদের নিয়ে সন্ধ্যায় ইফতারি করতে পারবেন না এবং রাতে দল বেঁধে মসজিদে গিয়ে তারাবিহ নামাজ পড়তে পারবেন না।
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন এক বিবৃতিতে বলেছে, “এবারের রমজান হবে মুসলমানদের জন্য একদম ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা, এবং পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির সঙ্গে তাদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে।”
রমজান উপলক্ষ্যে বুধবার চলমান কিছু বিধিনিষেধ কিছু শিথিল করেছে সৌদি বাদশাহ। মক্কা ও মদিনায় দুই পবিত্রতম মসজিদে তারাবি নামাজের অনুমতি দিয়েছেন। তবে আগের মতোই সাধারণ নামাজিরা এতে অংশ নিতে পারবেন না।
সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে জারি করা কারফিউ সকাল ৯টা থেকে বিকলে পাঁচটা পর্যন্ত কিছুটা শিথিল থাকবে। তবে মিশরে রমজান মাসে জামাতে নামাজসহ যে কোন ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ। ইরানে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনীও রমজানে জামাতে নামাজ না পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জেরুজালেমে ইসলামের তৃতীয় পবিত্র মসজিদ আল আকসাতেও রমজানে নামাজ হবে না, শুধু পাঁচবার আজান হবে।
মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সিঙ্গাপুর, ব্রুনেইতেও এখন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার ওপর যে বিধিনিষেধ চলছে, রমজান মাসে তার কোনো ব্যতিক্রম হবে না।
যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া এখন বন্ধ, এবং রমজান মাসে তার কোনো ব্যাতিক্রম এবার হবে – কোনো ইঙ্গিত নেই। ব্রিটেনে মসজিদগুলো রোজার সময় নামাজ, দোয়া-দরুদ, খুতবা ভিডিওতে লাইভ-স্ট্রিমিং করবে।
বাংলাদেশেও মসজিদে জামাত করে তারাবিহ না পড়ার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে পাকিস্তান কিছুটা ব্যাতিক্রমী। দেশটিতে তারাবিহ নামাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে নামজিদের একজনের সাথে আরেকজনের ছয় ফুট ব্যবধান রাখতে হবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যে গতি-প্রকৃতি তাতে ঈদুল ফিতর উদযাপন কেমন হবে – তা নিয়েও বিস্তর সন্দেহ রয়েছে। ইতিমধ্যে সৌদি গ্রান্ড মুফতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এবারের ঈদের নামাজও ঘরে বসে পড়তে হতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদের আগে শহর থেকে লাখ লাখ মানুষ গ্রামে যায়, তা এবার নিষিদ্ধ থাকবে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীও একই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তাছাড়া পুরো রমজান মাস ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে রাস্তায় যে মেলা হয়, তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ধর্ম পালনে, বিশেষ করে রোজা বা ঈদে- এ ধরনের সামজিক বিচ্ছিন্নতা ইসলামের ঐতীহ্যের একেবারে পরিপন্থী। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিমকে এবার আপস করতে হচ্ছে।
তবে ব্রিটেনে ইসলামি আইনের একজন বিশেষজ্ঞ ড. ইনাম আল বাদাওয়ী বলেন, রমজানের মূল আধ্যাত্মিক শিক্ষা-আদর্শ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা।