1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
ঢাকা ঘিরে সাত জেলা লকডাউন
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৮ অপরাহ্ন

ঢাকা ঘিরে সাত জেলা লকডাউন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১
নিষেধাজ্ঞা
ছবি: সাত জেলায় লকডাউন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ঢাকা বিভাগের সাত জেলায় আগামী নয় দিন জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ এ বিধিনিষেধের আওতায় থাকবে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। সোমবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকা বিভাগের সাত জেলায় অবাধ চলাচলে নয় দিনের নিষেধাজ্ঞায় রাজধানী ঢাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আজ সকাল থেকে এ বিধিনিষেধ কার্যকর হওয়ার ফলে এসব জেলার ওপর দিয়ে বাসে অন্যান্য জেলাগুলোতে যাতায়াত করা যাবে না। একই সঙ্গে এসব জেলার ওপর দিয়ে চলাচল করলেও এসব জেলার কোনো স্টেশনে ট্রেন থামবে না। নৌপথে আরিচা ও মাওয়া ঘাটের লঞ্চ এবং স্পিডবোট বন্ধ থাকবে, ফেরিতে শুধু মালবাহী গাড়ি পারাপার হতে পারবে। ঢাকা বা ঢাকার বাইরে থেকে ছেড়ে আসা কোনো নৌযান এ সাত জেলার মধ্যে কোনো ঘাটে দাঁড়াতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিধিনিষেধের কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সাত জেলায় লকডাউন আরোপ করা হয়েছে।’

এ সাত জেলায় কী কী বন্ধ থাকছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সব বন্ধ থাকবে। মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। শুধু মালবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছু চলবে না। জেলাগুলো ব্লকড থাকবে, কেউ ঢুকতে পারবে না।’

এসব জেলায় সরকারি অফিসগুলো কীভাবে চলবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকবে।’

বর্তমানে সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের মোংলা, যশোর পৌরসভা, অভয়নগর, বেনাপোল, শার্শা, কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা, পুরো মাগুরা, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নাটোর পৌরসভা ও সিংড়া এবং বগুড়া পৌরসভায় একই ধরনের বিধিনিষেধ চলছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

ঢাকার বিষয়ে নতুন কোনো বিধিনিষেধ আসছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনায় সাতটি জেলা ‘ব্লকড’ থাকবে বলা হলেও ওই জেলাগুলোর ওপর দিয়ে চলাচলকারী ঢাকাকেন্দ্রিক দূরপাল্লার বাসের কী হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহন ছাড়া এ সাত জেলায় সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকবে। তাহলে তো অন্য জেলায় যাতায়াতকারী বাসও ওই জেলা ক্রস করতে পারবে না, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেটাই হওয়ার কথা। এ সাত জেলায় ‘লকডাউন’ থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ঢাকার প্রবেশপথগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সাত জেলার ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে অন্যান্য জেলায় চলাচলকারী দূরপাল্লার বাস চালানো হবে কি না জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘চলবে না। চলবে না। ওরা হইতেছে এইটা উল্লেখ করে নাই। এখন শুনতেছি দূরপাল্লার কোনো গাড়িই চলবে না। ঢাকা থেকে যাবে না। ঢাকায় ঢুকবেও না। বের হবে না।’ লিখিত কোনো নির্দেশনা পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এ পরিবহন নেতা বলেন, ‘মৌখিকভাবে শুনছি। পুলিশের লোকের কাছে শুনছি। বিআরটিএর চেয়ারম্যানের কাছে শুনছি।’

মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরের ওপর দিয়ে উত্তরবঙ্গ, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলের যানবাহন চলাচল করে। নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে সিলেট ও চট্টগ্রাম এবং মুন্সীগঞ্জের ওপর দিয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বেশকিছু জেলার যানবাহন চলাচল করে।

বিধিনিষেধের ফলে এ জেলাগুলোর ওপর দিয়ে উত্তরবঙ্গ, ময়মনসিংহ ও সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের যানবাহন চলাচল করতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সহজ হিসাব হচ্ছে বিধিনিষেধে যুক্ত হওয়া জেলাগুলোর ওপর দিয়ে কোনো গাড়ি চলবে না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিষয়টি বলে দেওয়ার পর নতুন করে আর স্পষ্টীকরণের দরকার নেই বলে তারা জানিয়েছেন।

রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের গন্তব্যে যেতে যদি কোনো ‘লকডাউন’ এলাকা পড়ে সেখানে ট্রেন থামবে না, যাত্রী ওঠাবে না, নামাবেও না। ‘লকডাউন’ এলাকা ক্রস করে ট্রেন গন্তব্যে যাবে।

তিনি বলেন, একইভাবে অন্যান্য এলাকার জন্যও এ বিধি মেনে ট্রেন চালানো হবে। ‘লকডাউন’ এলাকার রেলস্টেশনগুলো বন্ধ থাকবে। রেলমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তঃনগর ট্রেনের ব্যাপারে এ নিয়ম মেনে ট্রেন চলবে। তবে সব লোকাল ট্রেন ওইসব এলাকায় চলাচল বন্ধ থাকবে। ‘লকডাউন’ এলাকা থেকে কোনো আন্তঃনগর কিংবা লোকাল ট্রেন থামবেও না, ছাড়বেও না। ‘লকডাউন’ এলাকায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার আলোকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাত জেলায় যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থার পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে নৌপথে অর্থাৎ ঢাকা-মাদারীপুর, ঢাকা-মিরকাদিম/ মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ/চাঁদপুর/নাড়িয়া, শিমুলিয়া (মুন্সীগঞ্জ)-বাংলাবাজার (মাদারীপুর)/মাঝিকান্দি (শরীয়তপুর), আরিচা (মানিকগঞ্জ) কাজিরহাট, পাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)-দৌলতদিয়া (রাজবাড়ী) নৌপথের সংশ্লিষ্ট নৌপথে লঞ্চ-স্পিডবোট-ট্রলারসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত চলাচল বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেছেন, বিধিনিষেধে আরিচা ও মাওয়া ঘাটের লঞ্চ ও স্পিডবোটও বন্ধ থাকবে, ফেরিতে শুধু মালবাহী গাড়ি পারাপার হতে পারবে। ঢাকা বা ঢাকার বাইরে থেকে ছেড়ে আসা কোনো নৌযান এ সাত জেলার মধ্যে কোনো ঘাটে দাঁড়াতে পারবে না বলেও তিনি জানান।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউয়ের প্রেক্ষাপটে গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন নামে চিহ্নিত করেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী। এরপর মে মাসে সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। তবে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে জুনের শুরুতে দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু আবার বাড়তে থাকে। তখন সংক্রমণের হার অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় আলাদাভাবে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ শুরু হয়। আর সারা দেশে চলমান সাধারণ বিধিনিষেধের মেয়াদ গত ১৬ জুন একসঙ্গে এক মাস বাড়িয়ে দেয় সরকার। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হয়। উচ্চঝুঁকির জেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসনকে পরিস্থিতি বুঝে জনপ্রতিনিধি ও কারিগরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে বিধিনিষেধসহ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!