মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে ঘোষিত কঠোর বিধি-নিষেধ বা ‘লকডাউন’র মধ্যেই আজ থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেয়া হচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে শুক্রবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আর সরকারের স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ নিশ্চিত করে শপিংমল ও দোকান পরিচালনা করতে অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, চলমান ‘লকডাউন’ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনায় রেখে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোববার থেকে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কেউ যেন মাস্ক ছাড়া কেনাকাটা না করেন সে বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করা হবে।’
এদিকে স্বাস্থবিধি মেনেই শপিংমল ও দোকানপাট খুলতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে শপিংমল ও স্থানীয় বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্তৃপক্ষ। সব ধরনের শপিংমলের প্রবেশপথে তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্র বসানো হয়েছে। পাশাপাশি মাস্ক পরিধান নিশ্চিত ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল ও দোকান খোলার বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খুলতে বিভিন্ন মার্কেটের দোকান মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শপিংমল ও দোকানপাট খুলবেন। প্রতিটি শপিংমলের প্রবেশ মুখে তাপমাত্র পরিমাপক যন্ত্র বসাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ক্রেতাদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।’
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহণ চালু ছিল বলে এই লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর। এরপর ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৮ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে দোকান-শপিংমল বন্ধ রাখাসহ পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সেই মেয়াদ শেষ হয় বুধবার (২১ এপ্রিল) মধ্যরাতে। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির এখনও উন্নতি হয়নি। তাই লকডাউনের মেয়াদ ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এ সময় সব ধরনের অফিস ও পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সতর্কতার অংশ হিসাবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের দাবি তুলে ধরেন। এরপরই সরকারের পক্ষ থেকে আসে দোকানপাট খুলে দেওয়ার ঘোষণা।