1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
যমুনায় রহিম খানের ইজারার মেয়াদোত্তীর্ণের পরও বালু উত্তোলন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ০৬:২২ অপরাহ্ন

যমুনায় রহিম খানের ইজারার মেয়াদোত্তীর্ণের পরও বালু উত্তোলন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা
  • প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০২৪

যমুনা নদীতে মানিকগঞ্জের শিবালয় বালুমহাল ইজারার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও বালু উত্তোলন করে আসছেন সদ্য নির্বাচিত শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খান। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশিয় তৈরি বড় ড্রেজারে (লোড কাটার) বালু উত্তোলন করে সরাসরি বাল্কহেড ভর্তি করে লাখ লাখ ঘনফুট বালু বিক্রি করছেন। এছাড়া নদী তীরবর্তী বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে দেশিয় তৈরি ডিজেল ইঞ্জিনচালিত ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করেছেন বালুদস্যুরা ।

আজ এসব ড্রেজার ও বাল্কহেডের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিবালয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম ফয়েজ উদ্দিন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা,  ছোট-বড় সাতটি ড্রেজার ও বাল্কহেড অকেজো করা হয়েছে।

অপরদিকে, নদীতে জানমালের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা যাদের দেখার দায়িত্ব সেই পাটুরিয়া নৌ-থানা পুলিশকে দুপুরে এসব বিষয় জানালেও দৃশ্যত কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। উল্টো সাংবাদিকদের বালুদস্যুদের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করে দেয়ার প্রস্তাব দেন এস আই আনোয়ারুল ইসলাম।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা থেকে জানা যায়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দের ১ লা বৈশাখ থেকে ৩০ শে চৈত্র পর্যন্ত জেলার সাতটি বালুমহালের ইজারা দেয়া হয়। এরমধ্যে শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীতে দুটি বালুমহালের মধ্যে শিবালয় এলাকায় বালুমহালের ইজারা নেন মেসার্স আল-মামুন ট্রেডার্সের মালিক আব্দুর রহিম খান। গত ৩০ শে চৈত্র ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।  চলতি বছরে এই বালুমহালের ইজারা দেয়া হয়নি। কিন্তু তারপরও তিনি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

আজ দুপুরে সেখানে সাংবাদিকরা তথ্যসংগ্রহে গেলে দেশিয় তৈরি বড় ড্রেজারে (লোড কাটার) বালু উত্তোলন করে সরাসরি বাল্কহেড ভর্তি করা দেখতে পান। এরপর সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলা হয়।

দেশিয় তৈরি বড় ড্রেজারে (লোড কাটার) কর্মরত মিলন হাওলাদার জানান, এটির মালিক তাজুল ইসলাম। তারা এখানে তিনজন কাজ করেন। হিসাব-নিকাশ রহিম খানের সঙ্গে মালিক করে থাকেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডে সরাসরি ভর্তি করে দিচ্ছেন তারা। একেকটি বাল্কহেডে ৫ থেকে ১০ হাজার ঘনফুট বালু ভর্তি করা হয়। প্রতি ঘনফুট বালু ১ টাকা করে বিক্রি করেন রহিম খান। পাটুরিয়া ফেরিঘাটের কোরোইতলা রহিম খানের ম্যানেজার রেজাউল বসে থাকেন। সেখান থেকে বাল্কহেডের বালু বিক্রি করে টোকেন দেন তিনি। টোকেন নিয়ে এলে বাল্কহেড ভর্তি করে দেন তারা। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি বাল্কহেড ভর্তি করেন।

বাল্কহেডে কর্মরত নুর আলম জানান, আজ টোকেন দেয়নি। রেজাউল এখানে এসে তার কাছ থেকে আট হাজার ঘনফুট বালুর দাম আট হাজার টাকা নিয়ে গেছেন। এখন তারা বাল্কহেডে বালু ভর্তি করছেন।

এ বিষয়ে দেশিয় তৈরি বড় ড্রেজার (লোড কাটার) মালিক তাজুল ইসলাম ফোনে জানান, মাস খানেক ধরে ওই স্থানে তার ড্রেজার বালু উত্তোলন করছে। আব্দুর রহিম খান তার ড্রেজার কন্ট্রাকে এনেছেন। প্রতি ঘনফুট বালু ১ টাকা দরে বিক্রি করেন রহিম খান। আর তাকে দেয়া হয় প্রতি ঘনফুট ৪০ পয়সা দরে।

অবৈধভাবে কেন বালু উত্তোলন করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম জানান, সব কিছু ম্যানেজ করার দায়িত্ব রহিম খানের। তিনি ড্রেজার কন্ট্রাকে এনেছেন। তাছাড়া রহিম খান এখন আর বালু উত্তোলনের বৈধ ইজারাদার নন। বিষয়টি তিনি জানেন না।

দেশিয় তৈরি বড় ড্রেজারে (লোড কাটার) বালু উত্তোলনের বিষয়ে রেজাউলের সঙ্গে ফোনে কথা হলে রহিম খান বালু উত্তোলন করছেন ও তিনি বিক্রির দায়িত্বে রয়েছেন বলে স্বীকার করে নেগোশিয়েন করার প্রস্তাব দেন। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি সবাই জানে। সবাইকে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন জানানো হয়। এরপর নৌ-থানা পুলিশকে জানাতে দাপ্তরিক নম্বরে ফোন দেয়া হয়। অপরপ্রান্ত থেকে রিসিভ করা হয়নি।

এরপর সাংবাদিকরা আলাদাভাবে কয়েক মিনিট ব্যবধানে পাটুরিয়া নৌ-থানা পুলিশকে দাপ্তরিক ফোনে বিষয়টি জানাতে কয়েকবার ফোন দিলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি। পরে নৌ-পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপারকে দাপ্তরিক ফোনে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে নিশ্চিত করেন।

কিছুক্ষণ পরে পাটুরিয়া নৌ-থানার এস আই (বর্তমানে আইসি’র দায়িত্বে) আনোয়ারুল ইসলাম এক সাংবাদিকের ফোনে কল ব্যাক করেন, অবৈধ ড্রেজার ও কাটার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি ওই সাংবাদিককে বলেন, ‘আপনি রহিম খানের ম্যানেজার রেজাউলের সাথে কথা বলেন। আমি বলে দিয়েছি। আপনারা অযথা নদীতে গিয়ে বসে আছেন কেন?’

এরপর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌ পুলিশের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।

এ ব্যাপারে আব্দুর রহিম খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিবালয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম ফয়েজ উদ্দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালান। এসব কাজে জড়িত ছয়জনকে হাতেনাতে আটক করে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।  নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ছয়টি ডিজেল ইঞ্জিনচালিত ড্রেজার, নদীর মধ্যে বালুমহালে একটি বড় ড্রেজার (লোড কাটার) ও একটি বাল্কহেড অকেজো করা হয়। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আব্দুর রহিম খান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দুই টার্ম আগেও তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!