1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশ: সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০

সরবরাহ ও আমদানি স্বাভাবিক থাকার পরও প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান ঘিরে ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে কারসাজি শুরু করেছে।সরবরাহ সংকটের অযুহাত দেখিয়ে রমজানকে সামনে রেখে দুই মাস ধরে ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে একাধিক পণ্যের দাম। চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা-রসুন, চিনি এমনকি রমজানে অতি ব্যবহৃত পণ্য ছোলা ও খেজুরের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এসব পণ্য কিনতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

সোমবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে প্রতিকেজি মাঝারি আকারের মশুর ডালের দাম বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। সাত দিনে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ০৫ শতাংশ। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি আদার দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। রসুনের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে কেজিতে ছোলার দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। প্রতিকেজি চিনিতে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। এছাড়া কেজিতে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে খেজুরের দাম।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সদস্য ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, প্রতিদিন বাজার তদারকি করা হচ্ছে। যে সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে, তা কোন কারণে বেড়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতি ও রমজানে নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তা সহনীয় রাখতে সংশ্লিষ্টদের বারবার নজর রাখতে বলেছেন। এর ভিত্তিতে একাধিক সংস্থা বাজার তদারকিতেও নেমেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও মনিটরিং সেল প্রতিদিন বাজারে কাজ করছে।

রাজধানীসহ সারা দেশে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি অব্যহত রাখা হয়েছে। এর পরও এসব কার্যক্রমকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলছে।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার, রামপুরা বাজার, কেরানীগঞ্জেরে সর্ব বৃহৎ জিনজিরা বাজারসহ একাধিক বাজার ঘুরে এ সব পণ্যের কোনো ধরনের সংকট দেখা যায়নি। বরং চাহিদার তুলনায় প্রতিটি দোকানে বেশি মজুদ লক্ষ করা গেছে।

অন্যদিকে ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এ সব পণ্যের আমদানি পরিস্থিতিও পর্যাপ্ত বলা হয়েছে। কিন্তু বাজারে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী করোনা পরিস্থিতিতে পরিবহনের অভাবে সরবরাহের ঘাটতির কথা বলে এ সব পণ্যের দাম বাড়িয়েছে।

এ দিন টিসিবি বাজার দর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা। রসুন বিক্রি হয়েছে ১১০-১৩০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৮০-১২০ টাকা। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। প্রতিকেজি আমদানি করা আদা ৩০০-৩৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা।

এছাড়া বাজারে প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকা।

টিসিবির তথ্য মতে, প্রতি কেজি খেজুর বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা। মশুর ডাল (ছোট দানা) বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. জুয়েল বলেন, রমজান আসার এক মাস আগ থেকেই বিক্রেতারা একাধিক পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। তবে সব থেকে এই এক সপ্তাহে বেশি বাড়াচ্ছে। কারণ আর মাত্র কয়েকদিন পর রমজান।

তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বিক্রেতারা কারসাজি করছে। দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতেও তারা অতি মুনাফা করতে ভোক্তার পকেট কাটছে।

একই বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মো. তুহিন বলেন, পাইকাররা সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে বাজারে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে তার কোনো সংকট নেই। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পণ্য আছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব ধরনের পণ্য আছে। গত বছরের তুলানায় আমদানিও অনেক ভালো। তবে পরিবহন সংকটের কারণে বেশি ভাড়া দিয়ে পণ্য আনতে হচ্ছে যে কারণে দাম বাড়তি।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে সিন্ডিকেটের কবলে চালের বাজার। করোনা মহামারীর এ সময়ে চট্টগ্রামে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে নিন্ম ও মধ্যবিত্তের চাল বলে খ্যাত মোটা ও সিদ্ধ চালের বস্তা প্রতি ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণে দাম বাড়ছে।

অন্যদিকে ক্রেতা ও ভোক্তাদের অভিযোগ চাকতাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলির চালের আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চালের বাজারকে অস্থির করে তুলছেন। রমজান সামনে রেখে অন্যান্য নিত্যপণ্য- আদা, পেঁয়াজ, রসুন, খেজুর, চিড়া এবং মসুরের ডালের দামও এক সপ্তাহের ব্যবধানে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। রোজার আগে নিত্যপণ্যের এমন দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের মধ্যে নাভিশ্বাস উঠেছে। খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোটা আতপ চাল বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১ হাজার ৯শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। গত সপ্তাহে তা ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ১শ’ টাকায়। আগে তা বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৮শ’ টাকায়। স্বর্ণা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকায়। গুটি সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৪শ’ টাকা। ১ হাজার ৯শ’ টাকা দামের বেতি আতপ চাল এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মিনিকেট, জিরাশাইল, পাইজমসহ সব ধরনের চাল বস্তায় সর্বনিন্ম ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া রমজানের অত্যাবশ্যকীয় চারটি ভোগ্যপণ্য- ছোলা, ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের দামও হু হু করে বেড়ে গেছে। মজুদ করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন। তারা বলছেন, এখনই সরকারের উচিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা।

মেসার্স এসএম রাইস মিলের মালিক আবুল কালাম জানান, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। মিল মালিকদের হাতে কোনো চাল নেই। যা ছিল দাম বাড়ার আগেই বিক্রি করে দিয়েছে। এখন উত্তরবঙ্গ থেকে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। পরিবহণ সংকটের কারণে চালের সরবরাহ কমে গেছে। সংকটের কারণে দাম বেড়েছে।

অন্যদিকে ৩৫ টাকার পেঁয়াজ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়ে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের খেজুরের দামও বেড়ে গেছে। খেজুর প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চিড়ার দাম ১৮০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭০০ টাকা। এই দাম বৃদ্ধির জন্য পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আবার পরস্পরকেও দুষছেন।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!