ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীজুড়ে ঢিলেঢালাভাবে করোনা সংক্রমণ রোধে ঘোষিত ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ পালিত হয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এদিন শপিং মল ও অন্যান্য দোকানপাট খুললেও তেমন ক্রেতা দেখা যায়নি। ফলে রাজধানীজুড়ে গণপরিবহনে ছিল যাত্রীর খরা। অধিকাংশ বাস যাত্রী শূন্য অথবা মাত্রাতিরিক্ত কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।
রাজধানীর খামার বাড়ির মোড়, মহাখালী, জাতীয় প্রেসক্লাব, পল্টন, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও শাহবাগসহ প্রতিটি জায়গায় গণপরিবহনের স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেলও নেই যাত্রীদের ভিড়। এক আসন ফাঁকা রেখে বাসে যাত্রী বসলেও অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন। আবার অনেককে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এর বাইরে গাড়িতে নেই কোনো জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা নেই। যদিও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নয়।
মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। ৪ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে সব ধরনের গণপরিবহন, মার্কেট, শপিং মলসহ সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। তবে শুরুর দিন থেকে এটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এর দুদিন পর ৭ এপ্রিল থেকে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব সিটিতে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তবে রাজধানীতে যাত্রীর অভাবে প্রথম দিন থেকে লোকসান দিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে বলে দাবি করে আসছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিলের মধ্যে চলাচলকারী রাজা সিটি বাসের সহকারী আলমগীর হোসেন বলেন, আইজক্যা মনে করছিলাম মার্কেট খুলব যাত্রী আইবো। কিন্তু আইজ দেখি আরও লোক নাই। তেলের ট্যাকাই উঠাতাছে না। মালিক রে কি দিমু আমরা কি নিমু।
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ছেড়ে আসা আজিমপুরগামী দেওয়ান পরিবহন। ফার্মগেট এলাকায় কথা হয় পৌঁছে গাড়ির চালক আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল বের হলাম গাড়ি নিয়ে, যাত্রী নেই বলা চলে। কাল থেকে আর গাড়ি চালাতে নাও আসতে পারি। যে অবস্থা যাচ্ছে এভাবে গাড়ি চালানো যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে বলেন, সবাই তো মানতে চায় না। মন চাইলে মাস্ক পরে। বেশি বললে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
আব্দুল্লাহপুর থেকে ছেড়ে আসা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ বাসে একই চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীদের অধিকাংশ মাস্ক না পড়েই বসে আছেন। আবার কাউকে কাউকে আসন ফাঁকা না রেখেও বসতে দেখা গেছে। আসন ফাঁকা রেখে বসছেন না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এক যাত্রী বলেন, আমার সঙ্গে বোন, এ জন্যই এক সঙ্গে বসেছি।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে এ মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কোনো ছাড় নয়। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সর্বমহলের সবাই এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি মহল্লায় ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজ করতে যদি কেউ পরপর তিন বার স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলে, মাস্ক না পরে বাড়ি থেকে বের হয়, তাকে বের হতে না দিয়ে বাসায় ফিরিয়ে দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে।
এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো খোলা রয়েছে- এনজিও, সরকারি, আধা-সরকারি, শপিংমল, বাজার ৬ ঘণ্টার বেশি না খোলা না রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে আমাদের করোনা সংক্রমণ কমে আসবে।
এই সাইটে প্রকাশিত তথ্য, সংবাদ, ছবি, অডিও-ভিডিও ও যেকোনো উপাদান গবেষণামূলক কাজে ব্যবহার ও প্রদর্শন করা যাবে। সেক্ষেত্রে ‘বাংলা বাহন’ রেফারেন্স উল্লেখ করতে হবে।