মানিকগঞ্জের শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীতে দেশীয় ড্রেজারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এসব ড্রেজারের বিরুদ্ধে আজ দুপুরে অভিযান চালিয়েছে পাটুরিয়া নৌ থানা পুলিশ।
অভিযানে বালু উত্তোলনকারীরা সটকে পড়লেও জব্দ করা হয়েছে ড্রেজার ও সরঞ্জামাদি। ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে মামলার দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছে নৌ-পুলিশ।
স্থানীয় ১৫/২০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে যমুনা নদীর নিহালপুর থেকে রৌহা এলাকা পর্যন্ত ৩০টি মতো দেশীয় তৈরি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে তীরবর্তী এলাকা। বিশেষ করে হুমকির মুখে পড়েছে জাফরগঞ্জ এলাকার নদীরক্ষা বাঁধ। বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
আর এসব ড্রেজারের মালিক ও শ্রমিক নদী তীরবর্তী এলাকার বেশকিছু মানুষ। তারা প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে বালু ফেলে এলাকার ডোবা-নালা, পুকুর ও নিচু জমি ভরাট করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তাদের কেউ কেউ এই প্লাষ্টিক পাইপের মাধ্যমে আশপাশের গ্রামের ৩/৪ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত বালু ফেলে জমি ভরাট করছেন। এতে জমির ওপর দিয়ে পাইপ নেয়ায় যুক্ত স্থানে পানি ও বালু বের হয়ে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের।
অপরদিকে, জাফরগঞ্জ-উথলি রোডসহ আঞ্চলিক রাস্তার ওপর দিয়ে নেয়া হয়েছে ড্রেজারের পাইপ। রোডের ওপর গতিরোধকের চেয়ে উচু হওয়ায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল ব্যাহত ও ঝুকিঁপূর্ণও হচ্ছে।
এই বালু দূরত্ব অনুযায়ী প্রতি ঘনফুট ৩ টাকা থেকে ১৫/২০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। স্থানীয়ভাবে এটিকে বালুর ড্রেজার ব্যবসা বলা হলেও তাদের নেই লাইন্সেস, নেই ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশন। এমনকি নদীতে বালু উত্তোলনের নেই সরকারি অনুমোদন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন তারা। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে কিছু বালু উত্তোলনকারী ধরা পড়লে জরিমানা দিয়ে ছাড়া পান।
এরপর আগের মতোই বালু উত্তোলনে নেমে পড়েন। তাছাড়া বালু উত্তোলনকারীরা কোন বিপদের সম্মুখিন কিংবা চাপে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে নগদ টাকা কিংবা প্রভাব খাটিয়ে নানা প্রক্রিয়ায় তদবিরে ম্যানেজ করে থাকেন।
আর এসব ড্রেজারের বিরুদ্ধে দুপুরে অভিযান চালায় নৌ-পুলিশ। জাফরগঞ্জ ও রৌহা এলাকায় অভিযানকালে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় ড্রেজার ব্যবসা একক ও যৌথ মালিকানায় করা হয়। সাতুরিয়া এলাকায় একক মালিকানায় ব্যবসা করেন রাকিব শেখ রাকু। তার আরেকটি ড্রেজার রয়েছে রৌহা এলাকায়। সেটি আশরাফুল ইসলাম ও মানিক সর্দারের সঙ্গে যৌথ মালিকানায়। ওই স্থানে আশরাফুল ইসলাম ও মানিক সর্দারের যৌথ মালিকানায় আরেকটি ড্রেজার ছিল। তা খুলে রাখা হয়েছে।
জাফরগঞ্জ বাজারের পশ্চিমে নদীর ভেতর পাশাপাশি রয়েছে তিনটি ড্রেজার। সেগুলোর মধ্যে শহিদুল ইসলাম মাহমুদ, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম, জাকির হোসেন ও হাফিজুর রহমানের যৌথ মালিকানায় একটি ড্রেজার রয়েছে। এই ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে প্লাষ্টিক পাইপে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরত্বে নয়াবাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে মিরপুর গ্রামের দিকে গিয়ে ভরাটের কাজ করছে।
এর পাশের আরেকটি ড্রেজার সোহেল হোসেন ও মো. কাঞ্চনসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন যৌথ মালিকানায়। আর অপর ড্রেজারটির যৌথ মালিকানায় আছেন তারা শেখ, বাসুদেব হালদার ও আব্দুল মমিন। রৌহা এলাকায় আরেকটি ড্রেজারে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার জয়নাল আবেদীন সরকার।
এসব ড্রেজার মালিকদের নামে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে, ড্রেজারের বিষয়ে তাদের কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ করেননি।
এদিকে, জাফরগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ দিক থেকে নিহালপুর এলাকা পর্যন্ত আরও ড্রেজার রয়েছে। অভিযানকালে স্থানীয়রা ওইসব ড্রেজারের বালু ব্যবসায়ী সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি।
রৌহা গ্রামের আব্দুল জব্বার অভিযোগ করেন, ড্রেজার ব্যবসায়ীরা এলাকার ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘরের ভেতর দিয়ে পাইপ বসায়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করে এলাকার অনেকেই তাদের হামলার শিকারসহ নাজেহাল হয়েছেন।
অভিযান শেষে পাটুরিয়া নৌ-থানার ওসি মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। জাফরগঞ্জ বাজারের পশ্চিমে নদীতে তিনটি ড্রেজার ও উত্তরে রৌহা গ্রামে দুইটি ড্রেজারে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়।
অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যায় জড়িতরা। পরে রৌহা গ্রামের স্থানীয় মেম্বার জয়নাল আবেদীন সরকারের ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। অন্য ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এই সাইটে প্রকাশিত তথ্য, সংবাদ, ছবি, অডিও-ভিডিও ও যেকোনো উপাদান গবেষণামূলক কাজে ব্যবহার ও প্রদর্শন করা যাবে। সেক্ষেত্রে ‘বাংলা বাহন’ রেফারেন্স উল্লেখ করতে হবে।