মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হওয়ায় পুরো এক বছর ব্যাংকঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই পাচ্ছেন ঋণগ্রহীতারা। চলতি বছর ঋণগ্রহীতারা তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি করা যাবে না। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এমন সুবিধা দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে সুবিধাটি এক দফা বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনার নেতিবাচক প্রভাব সহনীয় মাত্রায় রাখতে ঋণের কিস্তি পরিশোধের ব্যর্থতায় খেলাপি না করার সুবিধাটি চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ ‘ঋণ শ্রেণিকরণ’ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে।
মহামারী করোনার নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কায় ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি না করার সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ঋণটি যে মানে শ্রেণিকৃত ছিল, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই একই মানেই রাখতে হবে। এতে বকেয়া ঋণের কিস্তিগুলো কীভাবে নির্ধারিত হবে সেটাও বলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রথম দফায় জুন পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে এই সময় বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর করা হয়েছিল। করোনার ভীতি কাটলেও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘায়িত হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কভিড-১৯-এর কারণে অর্থনীতির অধিকাংশ খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘায়িত হওয়ার আশংকা থাকায় অনেক শিল্প, সেবা ও ব্যবসা খাত তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এটি বিবেচনায় নিয়ে ঋণগ্রহীতার ব্যবসায়ের ওপর কভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব সহনীয় মাত্রায় রাখার লক্ষ্যে ঋণের শ্রেণিমান পরিবর্তন না করার সময়সীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে উক্ত ঋণটি তদাপেক্ষা বিরূপমানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না। তবে কোনো ঋণের শ্রেণিমানের উন্নতি হলে তা যথাযথ নিয়মে শ্রেণিকরণ করা যাবে।
এতে আরও বলা হয়, ১ জানুয়ারি বিদ্যমান মেয়াদি (স্বল্পমেয়াদি কৃষিঋণ ও ক্ষুুদ্রঋণসহ) ঋণের বিপরীতে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময়কালীন প্রদেয় কিস্তিসমূহ বিলম্বিত হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট ঋণের কিস্তির পরিমাণ ও সংখ্যা পুনঃনির্ধারিত হবে। পুনঃনির্ধারণকালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যতসংখ্যক কিস্তি প্রদেয় ছিল তার সমসংখ্যক কিস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের কোনো কিস্তি পরিশোধিত না হলেও উক্ত কিস্তির জন্য মেয়াদি ঋণগ্রহীতারা কিস্তি খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন না।
১ জানুয়ারি বিদ্যমান চলমান ও তলবি ঋণ এবং উক্ত তারিখ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সৃষ্ট তলবি প্রকৃতির ঋণের মেয়াদ সমন্বয়ের তারিখ বিদ্যমান মেয়াদ থেকে ১২ মাস বা ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ (যেটি আগে ঘটে) পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এ সুবিধা চলাকালীন ঋণের ওপর সুদ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা বলবৎ থাকবে। তবে উক্ত সময়ে ঋণের ওপর কোনোরূপ দ- সুদ বা অতিরিক্ত ফি আরোপ করা যাবে না। কোনো গ্রাহকের এ সুবিধা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত না হলে পূর্বনির্ধারিত পরিশোধসূচি অনুযায়ী অথবা ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের অর্থ সমন্বয় করা যাবে।
করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় গত ১৯ মার্চ প্রথম দফায় ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণগ্রহীতারা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে কোনো ধরনের পরিবর্তন না করার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।