1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
করোনাভাইরাসমুক্ত থাকতে মেনে চলুন ১২টি নিয়ম
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৭ অপরাহ্ন

করোনাভাইরাসমুক্ত থাকতে মেনে চলুন ১২টি নিয়ম

ডেড লাইন
  • প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০২০

ডা. সুদেশ রক্ষিত

করোনাভাইরাস
আমরা এখন Covid-19 মহামারীর তৃতীয় ধাপে অবস্থান করছি। এর অর্থ- সীমিতভাবে হলেও কমিউনিটি পর্যায়ে করোনার বিস্তৃতি ঘটছে, কিন্তু উৎস চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এ পর্যায়ে রোগ বিস্তৃতি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন।

যেহেতু এখন পর্যন্ত কার্যকরী ওষুধ কিংবা টিকা আবিষ্কৃত হয়নি, তাই করোনা প্রতিরোধেই আমাদের সর্বতোভাবে নিয়োজিত হতে হবে।

এ পর্যন্ত সাত প্রকারের করোনাভাইরাস প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে। সাধারণ সর্দি-কাশির (common cold), ১৫℅ পর্যন্ত করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট।

ইতিপূর্বে দুইটি মহামারী দেখা দিয়েছিল, ২০০৩ সালে ও ২০১২ সালে। অভিনব ২টি করোনাভাইরাস SARS-COV-1 ও MERS-COV যথাক্রমে এর জন্য দায়ী।

এখন যে ভয়াবহ করোনা মহামারী চলছে তা প্রথমে শুরু হয় চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। এ অভিনব ভাইরাসের নাম দেয়া হয় SARS-COV-2। তিন মাসের মধ্যে করোনা মহামারী ভয়াবহ রূপ নিয়েছে- বিশ্বের ২০৪টি দেশ ও দুইটি আন্তর্জাতিক অঞ্চলে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে।

জ্যামিতিক হারে আক্রান্তের হার তার সঙ্গে মৃত্যুহারও বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশেও যাতে করোনা মহামারী আকারে ছড়াতে না পারে, সে জন্য সরকার জনসচেতনতা তৈরির উদ্দেশে বিভিন্নভাবে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত ২৬ মার্চ তারিখ থেকে সারা দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য ও ঘরে থাকার জন্য কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।

করোনা রোগের লক্ষণ যেমন জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে, কারণ করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অসংখ্য ভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে যার সংস্পর্শে সুস্থ ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারে। যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন তাদেরও কমপক্ষে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এ পর্যন্ত ১১৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে ১৩ জন মারা গেছেন।

বর্তমান কোভিড-19 মহামারীতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই কম-বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। তাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক শিষ্টাচারসহ হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলার বিকল্প নেই। অযথা আতঙ্কিত না হয়ে নিম্নবর্ণিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে শুধু করোনাই নয়, অন্যান্য অনেক সংক্রামক রোগ থেকেও নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি।

১. আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি সৃষ্ট ড্রপলেটের মাধ্যমে যেহেতু রোগটি ছড়ায় তাই কাশির শিষ্টাচার বজায় রেখে- যেখানে-সেখানে কফ, থুথু না ফেলা, ফেসমাস্ক, টিস্যু বা রুমাল ও হাতের কনুইয়ের ভাঁজ ব্যবহারও নিরাপদ। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব রেখে চলতে হবে।

২. জুতা ঘরের বাইরে রাখাই বাঞ্ছনীয়।

৩. দরজার হাতল বা কলিং বেল স্পর্শ না করে বাইরে থেকে ডেকে দরজা খুলতে বলা বা সংগে রাখা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে বেল বাজাতে পারেন।

৪. ঘরে ঢুকেই পরিহিত কাপড় ডিটারজেন্ট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং হাত সাবান-পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সম্ভব হলে গোসল সেরে নেয়া উত্তম।

৫. কখনোই অপরিচ্ছন্ন হাতে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করা যাবে না।

৬. খাওয়ার পূর্বে ও পরে সাবান-পানি এমনকি ছাই দিয়েও হাত পরিষ্কার করে নিতে পারেন।

৭. পরিবারের শিশু, বয়স্কদের ও প্রতিবন্ধীদের প্রতি অধিক যত্নবান হন। শিশুরা যেহেতু হ্যান্ড হাইজিন ও কফ এটিকেটের (শিষ্টাচার) বিষয়টি সঠিকভাবে পালন করতে পারে না, তাই তারা সহজেই অন্যদের রোগ সংক্রমণ করতে পারে। এমনকি শিশুদের মলের মাধ্যমেও রোগ সংক্রমণের আশংকা আছে। তাই শিশুর যত্নে মায়েদের আরও বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং প্রয়োজনে ফেসমাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

৮. ৫০ বছর বয়সের নিচে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- লেবুর রস ও টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল সাধারণভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

৯. শিশুদের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন, পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক-সবজি ও তরল খাবার আবশ্যক। শিশু পর্যাপ্ত ঘুমালে শরীরে গ্রোথ হরমোন তৈরির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে এবং রোগ-বালাই দূরে থাকবে।

১০. বার বার গরম পানি পান করলে শ্বাসনালীর ঝাড়ু প্রক্রিয়া উদ্দীপ্ত হয় ও শ্লেষ্মা তুলে নিয়ে আসে যা আমরা কাশির মাধ্যমে বের করে দিই, কিংবা গলাধঃকরণ করে ফেলি, এতে রোগীর অস্বস্তি অনেকাংশে দূরীভূত হয়।

১১. সর্দি, কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা হলে হাসপাতালে ছোটাছুটি না করে স্বাস্থ্য বাতায়নের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন ও নিজে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন (Self Quarantine)।

১২. বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির কথাবার্তা- এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে উত্থিত বায়োএরোসলের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। তাই রোগীর কক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সে ক্ষেত্রে সেবাদানকারীর যথাযথ পিপিই ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, রহস্যময় এ ভাইরাসটি স্পাইক প্রোটিনের দ্বারা মানবদেহের শ্বাসনালীর কোষ আক্রমণ করে। তাই এ প্রোটিনের প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে টিকা আবিষ্কারের পথ অনেকদূর এগিয়েছে। এমনকি মানবদেহে সফল পরীক্ষামূলক প্রয়োগও হয়েছে। হয়তো অচিরেই আমরা এ ভাইরাস প্রতিরোধী কার্যকরী টিকা প্রয়োগ করতে পারব এবং পৃথিবী করোনার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হবে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, শিশু বিভাগ
যশোর মেডিকেল কলেজ, যশোর
sudeshrakshit@yahoo.com

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!