দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পেলো বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো প্রোটিয়াদের তাদেরই মাটিতে হারিয়েছে টাইগাররা।
সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৮ রানের জয় পেয়েছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বধীন বাংলাদেশ। টাইগারদের দেওয়া ৩১৫ রানের জবাবে ৪৮.৫ ওভারে ২৭৬ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিন ফিফটিতে ৭ উইকেটে ৩১৪ রান করে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
মাহমুদউল্লাহ শেষ উইকেট হিসেবে কেশব মহারাজকে (২৩) এলডব্লিউ করলে ইতিহাস গড়া জয়ের আনন্দে মেতে উঠে বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম পাওয়ারপ্লে’তে তিন উইকেট হারিয়ে বসা দ. আফ্রিকার ভরসা হয়ে ছিলেন রসি ফন ডার ডুসেন ও ডেভিড মিলার। দুজনে ৭০ রানের জুটিও গড়েন। তার আগে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে (৩১) নিয়ে ৮৫ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন ডুসেন।
প্রোটিয়াদের মিডল-অর্ডারের লড়াইটা ভাঙার পর জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজ গলার কাঁটা হয়ে থাকা ‘কিলার মিলার’কে (৭৯) ফেরালে জয়টা প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসে বাংলাদেশের। তার আগে তাসকিন আহমেদ নিজের তৃতীয় শিকার হিসেবে ডুসেনকে (৮৬) ইয়াসির আলীর হাতে ক্যাচ বানালে স্বস্তি ফেরে টাইগারদের মনে।
দ. আফ্রিকার টেল-এন্ডারদের গুড়িয়ে দেন চার উইকেট নেওয়া মিরাজ। শেষ দুই ব্যাটার মহারাজের ২৩ ও অপরাজিত থাকা লুঙ্গি এনগিদির ১৫ রান কেবল হারের ব্যবধানটুকু কমাতে পেরেছে। ওপেনার জানেমান মালানকে (৪) ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন শরিফুল ইসলাম। গেঁড়ে বসা বাভুমাকেও ফেরান এই পেসার।
এর আগে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান সাকিব আল হাসান, লিটন দাস ও ইয়াসির আলী। তিনজনে পেয়েছেন ফিফটি। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানী শুরু করা বাংলাদেশ পাওয়ারপ্লে’র প্রথম ১০ ওভারে করে মাত্র ৩৩ রান। ওপেনিং জুটিতে ৯৫ রান এনে দেন তামিম-লিটন। যা দ. আফ্রিকার বিপক্ষে রেকর্ড উদ্বোধনী জুটি। আগের রেকর্ডটি ছিল ৪৬ রানের। ২০০৮ সালে সেবার তামিমের সঙ্গী ছিলেন ইমরুল কায়েস।
ব্যক্তিগত ৪১ রানে অধিনায়ক তামিম ফিরলেও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি তুলে নেন লিটন (৫০)। তবে স্লগ-সুইপ করতে গিয়ে ফেরেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম (৯)। সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যান সাকিব-ইয়াসির। দুজনে ৮২ বলে গড়েন ১১৫ রানের জুটি।
সাকিব ৬৪ বলে ৭ চার ও ৩ ছয়ে ৭৭ রান করে ফেরার আগে পান ৫০তম ফিফটি। এরপর তিন বলের ব্যবধানে বিদায় নেন ইয়াসিরও। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ফিফটি পেয়েছেন তিনি। ৪৪ চলে ৪ চার ও ২ ছয়ে ৫০ করেন ইয়াসির।
ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে ১৭ রানে ফেরেন আফিফ হোসেন। ১৭ বলে ২৫ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর মিরাজ (১৯) ও তাসকিনের (৭) ব্যাটে তিনশ’ পেরোনো সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। দ. আফ্রিকার হয়ে দুটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেছেন মার্কো জানসেন ও আন্দিলে ফেহলুকায়ো।
ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ নিয়ে জিতল বাংলাদেশ। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওভালে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান করেছিল টাইগার। সেবারও জিতেছিল বাংলাদেশ।
দ. আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। আগেরটি ছিল ৭ উইকেটে ২৭৮, কিম্বারলিতে। তবে ২০১৭ সালের সেই ম্যাচে ১০ উইকেটে হারে টাইগাররা।
উইকেট না পেলেও সেঞ্চুরিয়নে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার পথে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব।