1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
শিবালয়ে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সাময়িক বরখাস্ত
বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন

শিবালয়ে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সাময়িক বরখাস্ত

মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা
  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন কবিরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অসদাচরণ অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। বৃহস্পতিবার সকালে তারা এসব অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষককে ১৫ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। এই সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়ে প্রধান শিক্ষককে স্থায়ীভাবে অপসারণ দাবিতে বিকালে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা।

তেওতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সুমনের সঙ্গে শহিদুল ইসলাম মাহমুদ। ছবি সংগৃহীত

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, বেলা ১১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জাফরগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ করে আবার বিদ্যালয়ে এসে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকলেও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারিরা। ম্যানেজিং কমিটির সদ্য সাবেক দুই অভিভাবক সদস্য বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুজ্জামান ও তেওতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সুমনের ব্যবসায়িক পার্টনার ও আত্নীয় শহিদুল ইসলাম মাহমুদ বিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা প্রতিরোধ করে ফিরিয়ে দেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসে তাদের দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। ওই প্রধান শিক্ষক তেওতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সুমনের চাচাতো ভাই। এ কারণে আওয়ামীলীগের বেশকিছু নেতাকর্মী ও প্রধান শিক্ষকের দোসরা এসে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালায়। এ সময় ‘আলমগীরের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পিছু হটেন প্রধান শিক্ষকের দোসররা।

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নাঈমুল ইসলাম দুর্জয়ের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন কবির ও তার চাচাতো ভাই তেওতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সুমন। ছবি সংগৃহীত

শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘২০১৭ সালে আলমগীর এই বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অসদাচরণ শুরু করেন। তার কাছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা সব সময় তটস্থ থাকতে হতো। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন তিনি। নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি ২৯৬ টাকার স্থলে ৪৩০ টাকা আদায় করা হয়েছে। চলতি বছরের আগস্টের আগে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা ফি ৫৫০ টাকা আদায় করা হয়। অথচ পরীক্ষার ফি নেয়ার কথা ছিল ৪০০ টাকা। কিন্তু সেই সময় সরকার পতন আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা বন্ধ থাকে। পুনরায় বার্ষিক পরীক্ষায় ৫৫০ টাকা দাবি করলে শিক্ষার্থীরা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেতনের নামে বছরের শুরুতে ৫০০ টাকা করে প্রায় ৪ লাখ টাকা আদায় করা হয় এবং বছর শেষে আরও ৫০০ টাকা দাবি করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা দিতে রাজি হয়নি। অথচ খণ্ডকালীন তিনজন শিক্ষককে ভাতা দেয়া হয় বছরে ৯০ হাজার টাকা। ৫৫০ টাকা পরীক্ষা ফি আদায় করেও প্রবেশপত্র ফি বাবদ আরও ১০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হয়। ‍উপ-বৃত্তি ফরমের নামে ষষ্ট শ্রেণির প্রায় দুইশ’ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দুইশ’ টাকা করে ফরম মূল্য আদায় করে এবং প্রত্যেক অভিভাবককে ১ হাজার টাকা জমা রেখে ব্যাংক অ্যাকাউন্ড খুলতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু, সবাই উপ-বৃত্তি পায়নি।বছরের শুরুতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত সেশন ফি আদায় করা হয়। যারা দিতে ব্যর্থ হয়, তাদের বই দেয়া হয় না।

তাছাড়া, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। শিক্ষকদের কাছে কোচিং না করলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নম্বর দেয়া হয় না। অনেক সময় ফেল করিয়ে দেয়া হয়। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা দিয়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে ভূয়া মালিক সাজিয়ে বিদ্যালয়, ম্যানেজিং কমিটির আহ্বায়ক ও নিজের স্ত্রীর নামে জমি কিনেছেন। এই জমি কেনার জন্য ভূয়া বিল ভাইচারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে যেসব শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিলেও দেয়া হয় না রশিদ। প্রধান শিক্ষক, স্থানীয় আওয়ামী লীগ পরিবার সন্তান সহকারী শিক্ষক আব্দুল মজিদ ও কেরানি শফিক সিন্ডিকেট করে ভূয়া বিলা ভাইচার করে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাবের সঙ্গে বিল ভাউচার তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে প্রধান শিক্ষকের লুটপাটের প্রমাণ।’

এদিকে, শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকলে বিকাল চারটার দিকে বিদ্যালয়ে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার ও পুলিশ। তাদের কাছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন কবিরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অসদাচরণ অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেন তারা। তা শুনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রধান শিক্ষককে ১৫ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেন।

এ ব্যাপারে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন,‘ শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষককে ১৫ দিনের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও কাস্টমাইজেশন: বাংলা বাহন আইটি টিম
error: Content is protected !!