1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
তিস্তার পানি ও রোহিঙ্গা নিয়ে আবারও মোদির প্রতিশ্রুতি
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন

তিস্তার পানি ও রোহিঙ্গা নিয়ে আবারও মোদির প্রতিশ্রুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশ: রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্মশতবার্ষিকীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর বিশেষ তাৎপর্যের এবং বিশেষ সম্পর্কের উদযাপন বলে মনে করা হচ্ছে। সমঝোতা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে দুই দেশ ঐতিহাসিক এবং দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ। সমতা, বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিষয়টি মোদির এ সফরে প্রাধান্য পেয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের প্রত্যাশা তিস্তা চুক্তির বিষয়টি উত্থাপন করেন। জবাবে নরেন্দ্র মোদি তিস্তার বিষয়ে তার আগের প্রতিশ্রুতির কথাই বলেন। এরপর দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদারে সম্মত হন। ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বলেও মোদি জানান। এ সময় ঢাকা-দিল্লির মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়া কয়েকটি যৌথ প্রকল্প উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ঢাকা-দিল্লির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সমতা, বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের বিস্তৃতি ও কৌশলগত সহযোগিতাপূর্ণ হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী করোনাকালীন প্রথম সফর হিসেবে বাংলাদেশে আসার জন্য মোদিকে ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত কর্র্তৃক সহযোগিতার জন্য মোদির মাধ্যমে ভারত ও ভারতের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশে এসে অংশ নিতে পারায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মোদি। একই সঙ্গে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমীমাংসিত তিস্তা চুক্তির বিষয় তুলে ধরে বলেন, এর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ জড়িত। এই পানির ন্যায্য হিস্যা খুবই প্রয়োজন। জবাবে মোদি জানান, তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে আছে। এই সময়ে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের নদী কমিশনের বৈঠকে পানিসংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান হবে বলে দুই প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন। বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগিতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বাণিজ্যিক উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর অগ্রগতি ও আগামীর প্রকল্পগুলোর বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠকে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতের জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। ভারত এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে এমন আশ্বাস দেন মোদি। বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিমসটেক, সার্কসহ আঞ্চলিক জোটগুলোকে শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

সফররত মোদি সন্ধ্যা ৭টার দিকে বঙ্গভবনে যান। সেখানে তাকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অভ্যর্থনা জানান। পরে দুজনে বৈঠকে বসেন। সেখানে তারা দুই দেশের সম্পর্ক, উন্নয়ন, অগ্রগতিসহ নানান বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে টিকা প্রদান করায় রাষ্ট্রপতি ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আশা করেন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যেসব টিকা আসার কথা তা যথাসময়ে আসবে। মোদি বঙ্গভবনের পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

সফর শেষে এক টুইট বার্তায় মোদি লিখেছেন, ‘আমার সফরকালে বাংলাদেশের জনগণ যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, সে জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তার উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমার বিশ^াস, এই সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।’

মোদির সফরে স্বাক্ষরিত এমওইউগুলো হলো—১. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অভিযোজন ও প্রশমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা। ২. বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এবং ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর অব ইন্ডিয়ার (আইএনসিসি) মধ্যে সহযোগিতা। ৩. বাণিজ্য বিকাশে অশুল্ক বাধা দূর করতে একটি সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা। ৪. বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিজিএসটি) সেন্টারের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জাম, কোর্সওয়্যার ও রেফারেন্স বই সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ সহযোগিতা। ৫. রাজশাহী কলেজ মাঠের উন্নয়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন।

মোদি ও শেখ হাসিনা শিলাইদহের সংস্কারকৃত কুঠিবাড়ি, মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত স্বাধীনতা সড়ক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসমাধি, ভারতের উপহার ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল, দুটি সীমান্ত হাট উদ্বোধন এবং স্মারক ডাকটিকিটের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বৈঠকে স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, যোগাযোগ, জ¦ালানি ও উন্নয়ন সহযোগিতার যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে রয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়। এ ছাড়া দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ও স্থান পায়।

নরেন্দ্র মোদির সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার সফরটি আমাদের গর্বের বিষয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ভারত ছাড়াও অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এসেছেন এবং অনেক দেশের সরকারপ্রধানরা আসতে পারেননি। প্রায় ৬৫ দেশের অতিথিরা আসতে পারেননি। তারা মেসেজ পাঠিয়েছেন, বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের প্রশংসা করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী করোনার মধ্যেও সফর করেছেন। তিনি (মোদি) বলেছেন, বাংলাদেশের মধ্যে বিশেষ মমত্ববোধের কারণে তিনি এসেছেন। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ৫০ বছরের বেশি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে এবং ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনসহ কয়েকটি প্রকল্প ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স ও ১২ লাখ করোনা টিকা উপহার দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনাও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বেশ কয়েকটি উপহার দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস আজ চালু হলো। এটা যাত্রী পরিবহন করবে। ভারতবর্ষে ১৮৬২ সালে এই এলাকায় রেললাইন তৈরি হয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর এটি আবার চালু হলো। হলদিবাড়ির চীলাহাটি থেকে ভুটান যেন এর সঙ্গে যুক্ত হয় সে বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। সে বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হ্যাঁ-সূচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। একটি সড়কের বিষয়ে কথা হয়েছে। সড়কটি মুজিবনগর থেকে নদীয়া যাবে, সেখান থেকে কলকাতা যাবে।’

একই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা উঠেছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা তোলেন। নরেন্দ্র মোদি তিস্তা চুক্তির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ভারত থেকে ৩২ লাখ টিকা উপহার পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ভারতের টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে বলেও জানান তিনি।

শ্রিংলা বলেন, এই সফর হবে খুব বিশেষ তাৎপর্যের এবং এর মাধ্যমে আমাদের অনন্য ও বিশেষ সম্পর্কের উদযাপন হবে। যাতে জোর পাবে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিক। এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ভারত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে এই ইস্যুতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে ভারত।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ২৬ মার্চ দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন নরেন্দ্র মোদি। হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানমন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। মোদি সেখান থেকে সরাসরি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ যান স্বাধীনতার যুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। শুক্রবার বিকেলে তিনি জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। গতকাল তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যান। এ ছাড়া সাতক্ষীরায় যশোরেশ^রী কালীমন্দির পরিদর্শন ও পূজা করেন। পরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দি মন্দির পরিদর্শন করে ঢাকায় ফেরেন মোদি। গতকাল রাত ৯টার দিকে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!