1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
মানিকগঞ্জে সেই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে প্রবেশ, তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১০ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জে সেই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে প্রবেশ, তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ

মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা
  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

মানিকগঞ্জের  শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে বহিরাগতদের নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় আজ প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন কবির। এর প্রতিবাদে ‘আলমগীরের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান’সহ বিভিন্ন স্লোগানে বিদ্যালয় গেটে তালা ঝুলিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে পুলিশ গেলে মুচলেকা দেয়ার পর মুক্ত হন প্রধান শিক্ষক।

ছবি: মুক্ত হয়ে বিদ্যালয় ছেড়ে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন কবির।

এদিকে, ওই প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও লাখ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগে তিন  সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরইমধ্যে প্রধান শিক্ষক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আশ্রয়ে নানাভাবে বিষয়টি ম্যানেজ ও ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী জানান, গত ২১ শে নভেম্বর এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ ও মিছিল করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিদ্যালয় এসে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ১৫ দিনের ছুটিতে পাঠিয়ে লিখিত অভিযোগ চান।  প্রধান শিক্ষক মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ও সুবিধাভোগী। তার চাচাতো ভাই আবুল বাশার সুমন তেওতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রধান শিক্ষক আলমগীর ছিলেন আবুল বাশার সুমনের নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়ক। নৌকা প্রতীকে এলাকাবাসী ছাড়াও  শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছে গিয়ে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। ভোট না দিলে সন্তানদের বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দেয়ার ও ফেল করিয়ে দেয়ার ভয়ভীতিও দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগিরা।

ছবি: তেওতা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন কবির।

৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি নাম ভাঙিয়ে দলে ভিড়েন আলমগীর। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদও ভাগিয়ে নেন। পরে কমিটির ভেতরে-বাইরে আপত্তির কারণে সেই কমিটি কার্যক্রম করতে পারনি। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারের দোসর হয়ে এলাকায় কিছু বিএনপি’ নেতাকর্মী পরিচয়ধারী ব্যক্তিদের শেল্টার নেন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে নানাভাবে ম্যানেজ ও হুমকি-দামকি দেন এই ভাড়াটিয়া লোকজন।

পরে ২৪ শে নভেম্বর শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রতিবাদে আবারও বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অনুলিপি পাঠিয়েছেন তারা। প্রধান শিক্ষক বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়ে গিয়ে প্রশাসনে তদবির এবং অভিযোগকারীদের নানাভাবে ম্যানেজ, হুমকি-দামকি প্রদান করেন। এমনকি প্রধান শিক্ষক ও তার ভাড়াটে লোকজন অভিযোগকারীদের কাছে গিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি ও অপকৌশল চালায়। প্রধান শিক্ষকের প্রতিপক্ষের লোকজনকে বিভিন্নভাবে তদবিরও করেন তারা। তদন্ত কমিটি গঠনে দেরি হওয়ায় ও প্রধান শিক্ষক গোপনে প্রয়োজনীয় নথিপত্র আয়ত্ত্ব নেয়ার তৎপরতায় আলাদাভাবে দুটি সম্পূরক অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিবালয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম ফয়জুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের  তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। আর তদন্ত চালাকালীন প্রধান শিক্ষককে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী অভিযোগ করে জনান, গত সপ্তাহে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই প্রধান শিক্ষক ও তার ভাড়াটে লোকজন নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় অসৎ উদ্দেশ্যে আজ সকাল সাড়ে ১০ টায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঘটনাস্থলে পাঠান পুলিশ। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর স্লোগান ও বিক্ষোভে পিছু হটেন প্রধান শিক্ষকের ভাড়াটে লোকজন। কিছু লোকজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কক্ষের ভেতর প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বিদ্যালয়ে আর না আসার মুচলেকা দিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর কবল থেকে মুক্ত হন প্রধান শিক্ষক। এ সময় তেওতা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হারুণ প্রধান শিক্ষককে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করে বলেন,‘আলমগীরের পক্ষে তেওতা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হারুণ, খায়ের মন্ডল, আফজাল হোসেন, নুরুজ্জামান মন্ডল, তারা শেখ, আইয়ুব মাষ্টার, মিজান, সালাউদ্দিন, লাল মিয়া, মিঠু ও নুরুল হুদাসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসীকে নানাভাবে ম্যানেজ, ভয়ভীতি ও হুমকি-দামকি দিয়েছেন। আজ তাদের অধিকাংশই উপস্থিত থেকে আলমগীরকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করিয়েছেন। বন্ধ থাকার পরও আজ সকল শিক্ষককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত করেন প্রধান শিক্ষক। এরপর অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে বহিরাগত লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। যে কারণে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। সঠিক সময়ে প্রশাসন ও পুলিশের হস্তক্ষেপে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

জাফরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর কবির সাংবাদিকদের জানান, ছুটি শেষ হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে এসেছেন। সঙ্গে বহিরাগত লোকজন প্রসঙ্গে কোন কথা বলেননি তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রধান শিক্ষকও থাকবেন ছুটিতে। তারপরও প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছেন। সেখানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত  হলে প্রধান শিক্ষককেই দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।’

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৫।
ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও কাস্টমাইজেশন: বাংলা বাহন আইটি টিম
error: Content is protected !!