করোনা পরিস্থিতির প্রতিকূলতায়ও লেখক-পাঠক-প্রকাশক ও বইপ্রেমী মানুষের সমাগমে শুক্রবার ছুটির দিনে জমে উঠেছিল অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিন। এবারের মেলার শেষ শুক্রবার হওয়ায় এদিন বইপ্রেমী মানুষের সমাগম হয়েছে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি।
বেলা ১২টায় মেলা শুরু হলেও বিকেল ৩টার পর থেকে মূলত বাড়তে থাকে বইপ্রেমী মানুষের সমাগম। বিকেল ৫টায় মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয় বেশির ভাগ স্টল। শেষ বেলায় বই বিক্রিও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা।
এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বইমেলা। তবে ছুটির দিনের বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রকাশকেরাও। ঐতিহ্য, আগামী, প্রথমা, অন্যপ্রকাশ, তাম্রলিপি, বাতিঘরসহ বেশ কয়েকটি প্রকাশনার বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন, বিগত কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বই বিক্রি হয়েছে এদিন।
বাতিঘর এর স্বত্বাধিকার দীপঙ্কর দাশ বলেন, আমাদের স্টলে প্রতিদিন কিছু বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি বই আছে, যেগুলো বেশ চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদের ‘লাল সন্ত্রাস’ বইটি তো ভালো বিক্রি হয়েছে। মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করলে, ক্রেতা আসবেই বলে বিশ্বাস করি। এবার অনেকে মেলায় আসতে পারেননি করোনার জন্য। তারা ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করে কিন্তু বই কিনছেন। ফলে বই বিক্রি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
মেলায় কথা প্রকাশ এনেছে মোহাম্মদ বারীর নাট্যগ্রন্থ ‘তিন গল্পের নাট্যায়ন’। স্টলে ছিলেন এই লেখক। তিনি বলেন, “এবারের মেলা সব দিক থেকেই প্রতিকূল অবস্থায় হয়েছে। তারপরও মেলার পরিবেশ ভীষণ ভালো। বড় পরিসরে মেলা হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারটি সহজ হয়েছে। মেলায় যাদের দেখেছি, সবাই মাস্ক ব্যবহার করেছেন। এটা ইতিবাচক।”
মেলার লিটলম্যাগ চত্বর জমেছিল আড্ডা-গানে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশের এই চত্বরটি যেন তরুণদের আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছিল। চত্বরের খোলা জায়গায় মাটিতে ঘাসের ওপর বসে গিটার বাজিয়ে গান করেছেন একদল তরুণ। অধিকাংশ স্টল এদিন প্রাণচঞ্চল দেখা গেছে।
এদিন মেলায় বেশ কিছু বই কিনেছেন ধানমন্ডি থেকে আসা সামিয়া আফরিন। তিনি বলেন, “ঘরে বসে অনলাইনে দেখে তালিকা করেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম, করোনায় বের হব না। পরে মনে হলো বইমেলায় গিয়ে বই কেনার আনন্দটা অন্যরকম। তাই তালিকা নিয়ে এসেছি এবং প্রিয় লেখকের বইগুলো সংগ্রহ করছি। আরও দুই মেলায় আসব।”
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, শুক্রবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৮টি। এর মধ্যে গল্প-১০, উপন্যাস-৯, প্রবন্ধ-৬, কবিতা-৩৪, গবেষণা-১, ছড়া-১, শিশুসাহিত্য-২, জীবনী-৩, মুক্তিযুদ্ধ-৪, নাটক-১, বিজ্ঞান-২, ভ্রমণ-১, ইতিহাস-২, রাজনীতি-১, বঙ্গবন্ধু-৩, রম্য/ধাঁধা-২, ধর্মীয়-১, সায়েন্স ফিকশন-২, অন্যান্য-৩টি বই। পেণ্ডুলাম এনেছে জাকির তালুকদার রচিত ‘বেহুলার দ্বিতীয় বাসর’, অন্যপ্রকাশ এনেছে সেলিনা হোসেনের ‘বধ্যভূমিতে বসন্ত বাতাস’, আনন্দ এনেছে উদয় হাকিমের ‘দার্জিলিঙে বৃষ্টি কালিম্পঙে রোদ’, পাঞ্জেরী এনেছে পলাশ মাহবুবের ‘ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ’, হাওলাদার প্রকাশনী এনেছে নাজমুল হুদা পারভেজের ‘হামার চিলমারী’, ভাষাচিত্র এনেছে আনন জামানের ‘বঙ্গবন্ধু বিষয়ক নাটক’ প্রভৃতি।