1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
সব‌চে‌' বিষধর সাপের রাজত্ব যে দ্বীপে
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন

সব‌চে‌’ বিষধর সাপের রাজত্ব যে দ্বীপে

ফিচার ডেস্ক:
  • প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০২০

এমন একটা দ্বীপের কথা কী কল্পনা করা সম্ভব? যেখানে মানুষের কোনো বসতি তথা অস্তিত্বই নেই, নেই কোনো শুভ্রতার চিহ্ন! রয়েছে শুধু সাপের রাজত্ব! শুধুমাত্র কল্পনায় নয় বাস্তবেও এমন একটা দ্বীপের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যেখানে মানুষ নয় রাজত্ব করে বিষধর সাপেরা।

প্রায় ২০ মাইল দীর্ঘ এই দ্বীপটি আটলান্টিক মহাসাগরের তীর ঘেষে ব্রাজিলের সাও পাওলো সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৯০ মাইল দূরে অবস্থিত। এটি ইলহাদা কুইমাদা গ্রান্দে নামে পরিচিত। এই দ্বীপটির বিভিন্ন জায়গা জুড়ে রয়েছে গভীর বনাঞ্চল আবার কোথাও রয়েছে পাথর দ্বারা আবৃত শুষ্ক মাটি। পর্তুগিজ শব্দ কুইমাদার অর্থ পুড়িয়ে ফেলা বা উৎপাটন করে ফেলা। ১৯০৯ সালে এখানকার বেশ কিছু স্থানের গভীর বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছিলো কুইমাদা শব্দের অর্থের সাথে মিল রেখে।

যেটি ছিলো তৎকালীন কয়েকজন মানুষের একটি অসৎ পরিকল্পনা। পরবর্তীতে জাহাজ পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই দ্বীপে একটি বাতিঘর নির্মিত হয়েছিল এবং বাতিঘর সয়ংক্রিয় হয়ে যাবার পর সেখানকার যে শেষ একজন অধিবাসী ছিলেন তিনিও কুইমাদা ত্যাগ করেন।

ইলহাদা কুইমাদা গ্রান্দের অতীতের এবং বর্তমানের একটাই পরিচয়, এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং ভয়ংকর সাপের আশ্রয়স্থল। ব্রাজিলে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য যতগুলো সুন্দর জায়গা আছে তার মধ্যে ইলহাদা কুইমাদা গ্রান্দে নামক স্থানটি প্রথম দিকে অবস্থান করে। প্রায় প্রত্যেক ব্রাজিলিয়ানই এই দ্বীপ সম্পর্কে অল্প কিছু হলেও জানে কিন্তু বেশিরভাগ ব্রাজিলিয়ান সেখানে যাবার সাহস দেখায় না!

সারা বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক এবং বিষধর সাপের মধ্যে বোতরোপস ইনসুলারিস প্রজাতির সাপ (গোল্ডেন ল্যান্সেডও বলা হয়) শুধুমাত্র এই দ্বীপেই বাস করে৷ বিষধর সাপ হিসেবে এর প্রজাতিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করা হয়। এই প্রজাতি ছাড়াও ডিপসাস এলবিফ্রনস নামক আরেক প্রজাতির তুলনামূলক কম বিষধর সাপের বসবাস রয়েছে এই দ্বীপটিতে।

সাধারণত এই দুই প্রজাতির সাপই দেখতে পাওয়া যায় এই দ্বীপে। দ্বীপটিতে অবস্থান করতে পারা তো দূরের কথা চিন্তা করলেই গায়ের লোম শিহরে উঠে এই ভেবে যে, এই দ্বীপটিতেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপ বোতরোপস প্রজাতির বোতরোপস ইনসুলারিস এবং এর সংখ্যা কয়েক লক্ষাধিক এবং বেশ ঘনত্বপূর্ণ।

সাধারণ বিষধর সাপের থেকে এই সাপ কয়েকগুণ বেশি বিষধর হয়ে থাকে। এই প্রজাতির সাপগুলো দেখতে উজ্জ্বল হলুদাভ বাদামি বর্ণের। এগুলো গড়ে ২৮ ইঞ্চি থেকে সর্বোচ্চ ৪৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এদের মাথা অন্যান্য সাধারণ সাপের তুলনায় বেশ তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে। খাদ্যের প্রসঙ্গে বলতে গেলে এসব সাপ আকাশে উড়ন্ত পাখিকেও মূহূর্তেই ছো মেড়ে কাবু করে নিজের খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। এছাড়া টিকটিকি এবং অন্যান্য সাপও থাকে এদের প্রতিদিনের খাদ্যের তালিকায়।

এদের বিষ এতই ভয়ানক যে, এই বিষ দিয়ে মুহূর্তেই মানুষের মাংসকে গলিয়ে ফেলা সম্ভব। সাধারণত এই সাপের বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশ করার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই মানুষটি মারা যায়। তাই যাবতীয় হিংস্রতার কথা বিবেচনা করে এই দ্বীপটিকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করেনি ব্রাজিল সরকার।

জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত না হলেও অনেক বিখ্যাত মানুষ এই স্নেক আইল্যান্ডে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং সেখানকার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। এই দ্বীপটি দূর থেকে অসম্ভব মনোরম দেখায় কিন্তু ভয়ংকর সাপের উপস্থিতি বিপজ্জনক হবার আশঙ্কায় ব্রাজিল সরকার কঠোরভাবে ভ্রমণসুবিধা নিশ্চিত করে।

যেকোনো মূল ভূখন্ডের সাপের চেয়ে তিন থেকে পাঁচগুণ শক্তিশালী সাপের উপস্থিতির কারণেই পর্যটকেরা সেখানে যাওয়ার সাহস করে না। এখানকার সাপগুলো শিকারের মাংস পেঁচিয়ে অতিদ্রুত হত্যা করে ফেলতে সক্ষম। দ্বীপে এগুলোর ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি অর্থাৎ প্রতি বর্গমিটারে কয়েকস্তরে এক থেকে পাঁচটি সাপ রয়েছে।

এক পরিসংখ্যান মতে, এই দ্বীপে প্রায় চার লাখ ৩০ হাজার সংখ্যক সাপ আছে যদিও এই সংখ্যা এখন বেশ কমে গিয়েছে। এই সাপগুলোর বিষ অত্যন্ত মূল্যবান, কালোবাজারে প্রতি একশ গ্রাম বিষের দাম সাড়ে ১৭ হাজার পাউন্ড। এই দ্বীপটি জীববিজ্ঞানী এবং গবেষকদের জন্য একটি জীবন্ত পরীক্ষাগার।

তারা বোতোরোপস ইনসুলারিস সম্পর্কে অধ্যয়ন করার জন্য দ্বীপ ভ্রমণের বিশেষ অনুমতি পায়। সৌন্দর্যে ভরপুর এবং সাপের রাজত্বে ভরা এই দ্বীপটি নিয়ে দিনে দিনে মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!