করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এ সময় জেলার ভেতরে বাস বা গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। তবে আন্তঃজেলা বাস চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে। এদিকে আগামী ঈদুল ফিতরের সময় শিল্প-কারখানায় সরকার নির্ধারিত তিনদিনের বেশি ছুটি দেয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এতে অংশ নেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, চলমান লকডাউন যেটা আছে তা ১৬ মে পর্যন্ত চলবে। আর ৬ মে থেকে গণপরিবহন জেলার ভেতর চলাচল করতে পারবে। তবে এক জেলার বাস আরেক জেলায় চলবে না। এছাড়া লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ সরকারের সিদ্ধান্তে দূরপাল্লার বাস চলাচল করবে না ঈদে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওনারা (মালিক সমিতি) আমাদের কথা দিয়েছেন, কোনোভাবে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হবে না। যদি করা হয় তাহলে বন্ধ করে দেয়া হবে। এটা আমরা দেখব।
দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে ঈদে বাড়ি ফেরায় ভোগান্তি বাড়বে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ঈদে তো অতিরিক্ত ছুটি নেই। ঈদ ১৪ মে হতে পারে। তাহলে শুক্র ও শনিবার এমনিতে বন্ধ, আর একদিন বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো বন্ধ দেয়া যাবে না। তিনদিনের বাইরে বেসরকারি শিল্প-কারখানাও কোনো ছুটি দিতে পারবে না। সরকারি অফিস বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যেগুলো যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।
মানুষকে মাস্ক পরাতে সরকার কঠোর অ্যাকশনে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পুলিশ ও সিটি করপোরেশন এবং প্রশাসন দেশের প্রতিটি মার্কেটে সুপারভাইজ করবে। যদি কোনো মার্কেটে বেশি লোক হয়, তা কন্ট্রোল করা যাবে না, তবে মাস্ক ছাড়া যদি বেশি লোকজন ঘোরাফেরা করে, তাহলে প্রয়োজনে সেসব মার্কেট বন্ধ করে দেব। দোকান মালিক সমিতি এ বিষয়ে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পরে সাতদিন করে দুদফা লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হবে ৫ মে মধ্যরাতে।
এ বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস ও গণপরিবহন আগের মতোই বন্ধ আছে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালাতে পারবে। শুরুতে লকডাউনে শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিং মল খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রী বহন বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এরই মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত দেশগুলো বাদে অন্য সব গন্তব্যে কঠোর শর্তসাপেক্ষে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে। লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। সতর্কতার অংশ হিসেবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার গত বছরের চেয়ে ১৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পাঁচটি মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৪১টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয় ২০টি। ২১টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত ৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে একটি নীতি বা কর্মকৌশল এবং একটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ছয়টি।