1. admin@banglabahon.com : Md Sohel Reza :
নাগরিকের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ অসাংবিধানিক: আদালত
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ন

নাগরিকের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ অসাংবিধানিক: আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশ: রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১
High_Court

নাগরিকের চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকার কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের খেয়ালখুশি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছে উচ্চ আদালত। অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তির ওপর অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশত্যাগে বিধিনিষেধ আরোপ সংবিধান ও মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ উল্লেখ করে এর সময়সীমা নির্দিষ্ট করার তাগিদ এসেছে হাইকোর্ট থেকে।

আদালত বলেছে, এ-সংক্রান্ত আইন বা বিধি প্রণয়ন এখন সময়ের বাস্তবতা। আইন বা বিধি না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে আবেদন করে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।

আতাউর রহমান নামে নরসিংদীর এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পর তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে করা একটি রিট আবেদনের ওপর জারি রুলের চূড়ান্ত রায়ে এমন অভিমত দিয়েছে হাইকোর্ট।

গত ১৬ মার্চ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত রায়ে আতাউর রহমানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে দুদকের দেওয়া চিঠি অবৈধ ঘোষণা করে। রবিবার ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করতে গত বছরের ২৪ আগস্ট রিট আবেদনকারী আতাউর রহমানকে নোটিশ দেয় দুদক। ওই বছরের ২২ অক্টোবর সম্পদের বিবরণী দাখিল করলেও অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান থাকায় তিনি যাতে বিদেশ যেতে না পারেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গত ২০ ডিসেম্বর ইমিগ্রেশন পুলিশ সুপারকে (এয়ারপোর্ট) চিঠি দেয় দুদক।

এ চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান আতাউর রহমান। ৪ ফেব্রুয়ারি ওই চিঠির বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় আসে।

ইতিমধ্যে হাইকোর্টের এ রায় স্থগিত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার এ বিষয়ে শুনানির কথা রয়েছে। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতির আবেদন) ফাইল করে রেখেছি। পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাতে পেলে আপিলটি করা হবে।’

রায়ে হাইকোর্ট বলে, আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩৬ এ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার (ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশেন অব হিউম্যান রাইটস) অনুচ্ছেদ-১৩ এর প্রতিফলন ঘটেছে। ব্যক্তির চলাফেরার স্বাধীনতা যা তার জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত তাতে হস্তক্ষেপ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। কোনো নাগরিকের চলাফেরা তথা ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হলে সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট কারণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই জানাতে হবে, যাতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তার বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান।

আদালত বলে, সরকার কিংবা রাষ্ট্রের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা শুধু ‘সৌখিন’ বা ‘খেয়ালি ইচ্ছার’ বশবর্তী হয়ে দেশের কোনো নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করতে বা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে না। একজন নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতা ব্যক্তি জীবনের স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত, যা শাশ্বত। এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে হলে আইন নির্ধারিত নিয়মে বা পদ্ধতিতে করতে হবে। অর্থাৎ কোনো নাগরিকের চলাফেরার মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করতে হলে তা করতে হবে আইন বা বিধি অনুসারে, জনস্বার্থে।

হাইকোর্ট তার অভিমতে বলে, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বারিত করার প্রয়োজন হলে এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধি প্রণয়ন এখন সময়ের বাস্তবতা এবং ওই আইন বা বিধিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশত্যাগে বারিত করার কারণ জানানো, গৃহীত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির বক্তব্য/আপত্তি প্রদানের সুযোগ রাখতে হবে। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারো ওপর এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ সংবিধান ও মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ, তাই এর সময়সীমা নির্দিষ্ট করাও ন্যায়সঙ্গত হবে।

হাইকোর্ট বলে, এটা বাস্তবতা যে, দুর্নীতি কিংবা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলাসমূহ অনুসন্ধান বা তদন্ত কিছুটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যদিও সংশ্লিষ্ট বিধিতে অনুসন্ধান বা তদন্তের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। আমাদের বিচারিক অভিজ্ঞতা বলে যে, কমিশন কিংবা অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা/কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম আইন বা বিধিতে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারে না। এটাও বাস্তবতা যে, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে দেশত্যাগ করছে এবং পরবর্তীতে তাদের আর আইন-আদালতের সম্মুখীন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সব বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে দুর্নীতি বা মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত মামলায় কিংবা অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রেও অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বারিত বা তার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা সময়ের চাহিদাও বটে। সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধির অনুপস্থিতিতে কোনো তদন্ত সংস্থার দাপ্তরিক আদেশ দিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ বা কার্যধারা গ্রহণ সংবিধান পরিপন্থি।

হাইকোর্ট বলে, সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আদালতের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট অভিমত এই যে, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত হবে যে, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে যে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বারিত করার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন করা এবং যতক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনের আইন বা বিধি প্রণয়ন করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তবর্তী ব্যবস্থা হিসেবে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতের নিকট এ ধরনের বারিত আদেশ প্রার্থণা করা এবং আদালতের অনুমতি গ্রহণ করা।

হাইকোর্ট আরো বলে, যথাযথ আইন বা বিধি প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত অত্র রায়ের নির্দেশনা ও অভিমতের আলোকে অভিযোগের অনুসন্ধান কিংবা মামলার তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা/কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারসম্পন্ন আদালত সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেশ ত্যাগের বিষয়ে যথাযথ আদেশ প্রদানে সম্পূর্ণ এখতিয়ারবান হবে। অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা/কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রতিনিধির মাধ্যমে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে আবেদন জানালে আদালত সস্তুষ্টি সাপেক্ষে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যার মেয়াদ ৬০ দিনের বেশি হবে না বারিত আদেশ কিংবা স্বীয় বিবেচনায় ন্যায়সঙ্গত অন্য কোনো আদেশ প্রদান করতে পারবে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা পক্ষ ওই আদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন জানাতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং নথিপত্র যদি দাখিল করা হয় পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারবে।

শেয়ার করতে চাইলে...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ...
© বাংলা বাহন সকল অধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪।
ডিজাইন ও আইটি সাপোর্ট: বাংলা বাহন
error: Content is protected !!