নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
ব্যাখ্যায় লিখিত আকারে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন তার কপি এসেছে সাংবাদিকদের হাতে।
সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেওয়া চিঠিতে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমার অনিচ্ছাকৃত বক্তব্যে যদি দলের কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করি, আমি এই পত্রের মাধ্যমে দলে ও দলের বাইরে চলমান সকল ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৭ এপ্রিল যখন আমি ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখি ঠিক তারপর মুহূর্তে স্থায়ী কমিটির মিটিং ছিল। আমার বক্তব্য রাখার সময় বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার তাড়া আসে। তাই কথাগুলো যেভাবে বলতে চেয়েছি, সেভাবে বলতে পারিনি।’
স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘বক্তব্য রাখার সময় এমন কিছু শব্দ চলে এসেছে সেগুলো ইচ্ছাকৃত নয়। আমি কোনো বক্তব্য দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বলিনি। এরপরও ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে তা অনিচ্ছাকৃত। সেদিন সময় পেলে এমনটা হতো না।’
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘এতে করে আমার রাজনৈতিক আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে। তারপরও বলতে চাই, যে কোনো পরিস্থিতিতে দলের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কূটকৌশল যথাযথ জবাব দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত থাকবো।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার তার অনৈতিক শাসন দীর্ঘায়িত করতে, একই সঙ্গে বিএনপি ও বিরুদ্ধ মতবাদকে ধ্বংস করতে গুম, খুন, নির্যাতন, দমনপীড়ন ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ইলিয়াস আলীসহ এ যাবৎ যত রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী গুম হয়েছে তা বর্তমান সরকার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও তাদের আজ্ঞাবহ মিডিয়া আমাকে ও দলকে যেমন বেকায়দায় ফেলেছে, তেমনি আমার দলও আমার বক্তব্যের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো অনুধাবন করার চেষ্টা না করে আওয়ামী লীগের কূটকৌশলের জবাব না দিয়ে এই চিঠি প্রেরণ করে আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।’
১৮ এপ্রিল প্রদত্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যা করেছি জানিয়ে চিঠির শুরুতে মির্জা আব্বাস লিখেছেন, দীর্ঘ ৪৫ বছরের মধ্যে যা কখনো ঘটেনি, এমন একটি অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও বেদনাদায়ক ঘটনার সম্মুখীন আমাকে হতে হয়েছে এই চিঠির মাধ্যমে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে রাজনীতিতে আজ অবধি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দল ও জিয়া পরিবারের প্রতি আমার নিষ্ঠা ও কর্তব্য পালনে রাজনৈতিক জীবনে কখনোই সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর কিছু করিনি।’
স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘ওই দিনের বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি- ইলিয়াস আলী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ গুম একই সূত্রে গাঁথা। সরকার বলছে তারা করেনি। আমি মূলত সরকারের বক্তব্য কটাক্ষ করতে চেয়েছি। আমার কটাক্ষ করা বক্তব্য ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বড় দলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকে, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা, গ্রুপিং থাকে। এই গ্রুপিং যেন বাইরের কেউ ব্যবহার করে দলের নেতাদের ক্ষতিসাধন না করতে পারে তার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু সেটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে। আওয়ামী লীগ ও তার আজ্ঞাবহ গণমাধ্যম আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে।’
সোমবার রাতে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘চিঠির জবাব দিয়েছি।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এদিন সন্ধ্যায় বলেন, ‘মির্জা আব্বাসের ব্যাখ্যা পেয়েছি। এখন তার বক্তব্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।’
গত ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের নয় বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মির্জা আব্বাস বলেছিলেন, ‘ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পেছনে দলের একটা অংশ জড়িত। সরকার ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করেনি।’
তার এমন বক্তব্যে দলে ও দলের বাইরে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এরপর দলের পক্ষ থেকে চাপে পড়ে পরদিন নিজের শাহজাহানপুরের বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আব্বাস দাবি করেন মিডিয়ায় তার বক্তব্য খণ্ডিত করে প্রচার করেছে।
এরপর দলের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।